নীলফামারীতে ধর্মপালের বৌদ্ধমন্দিরের নিদর্শন আবিষ্কার

তাহমিন হক ববী॥
প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো একটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে নীলফামারী  জলঢাকা উপজেলার গড় ধর্মপালে । প্রতœতত্ত্ববিদদের ধারণা, ১২ শতকের দিকে পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল এটি নির্মাণ করেছিলেন।  এ কথা জানান খনন কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা।
প্রতœতত্ত্ব বিভাগের একটি দল ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটির খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জলঢাকার ধর্মপালগড় এলাকায় আবিষ্কার হয়েছে মন্দিরের এই নিদর্শনটি। দ্বিতীয় ধর্মপাল এখানে তার রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। আর তার নামানুসারেই স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে ধর্মপালগড়। সাত সদস্য বিশিষ্ট খননকারী দলের প্রধান এবং বগুড়ার মহাস্থানগড় জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক মুজিবুর রহমান জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মন্দিরটির উপরের অংশ পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এর নিচের কিছু অংশ এখনো মাটির নিচে রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত স্থানটিতে ভাঙা কিছু মাটির পাত্র, সাদা মার্বেলের ফলক এবং পোড়া মাটির বড় বড় খন্ডদ্বারা নির্মিত একটি দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মুজিবুর রহমান। দেয়ালটি ২৫ মিটার দীর্ঘ এবং ০.৮৫ মিটার (প্রায় ৩৩.৫ ইঞ্চি) পুরো। মন্দিরটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে একটি ১.২ মিটার প্রশস্ত রাস্তা। মুজিবুর রহমান জানান, ধর্মীয় প্রার্থনার অংশ হিসেবে রাস্তাটি প্রদণি করা হতো।
সরকারের বাৎসরিক খনন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২০ জন সদস্যকে সাথে নিয়ে মুজিবুর রহমান ধর্মপালগড়ে কাজ শুরু করেন বলে জানান তিনি। 
স্থানটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা বিবেচনা করে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এখানকার ময়নামতির কোট, খেরকাঠি পীরের আস্তানা এবং আরো একটি স্থানসহ মোট ৩০ একর জায়গাকে সংরতি প্রতœতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। মহাস্থানগড় জাদুঘরের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক এসএম হাসনাত বিন ইসলাম জানান, ধর্মপালগড়ে প্রাপ্ত পোড়া মাটির খন্ডগুলোর সাথে মহাস্থানগড়ের পোড়া
মাটির খন্ডগুলোর স¤পূর্ণ মিল রয়েছে। ঐতিহাসিক এ স্থানটি স¤পর্কে রংপুর জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক এবং খননকারী দলের সদস্য আবু সায়েদ ইনাম তানভিরুল বলেন, ১৮০৭-১৮০৮ সালে ব্রিটিশ প্রতœতত্ত্বাবিদ ড. ফ্রান্সিস ধর্মপালগড় ভ্রমণ করেছিলেন। এর পরের বছর সরকার এবং ইতিহাসবিদদের স্থানটি স¤পর্কে জানাতে তিনি একটি মানচিত্রও প্রস্তুত করেছিলেন।
১৮৭৬ সালে আরো এক ব্রিটিশ গবেষক মেজর রেনেল এখানে এসেছিলেন। তিনি এখানে একটি জরিপ চালান এবং নিদর্শনটির খনন কাজ বিষয়ে একটি বই লেখেন।
ঐতিহাসিক তথ্যমতে, পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চলের দ্বিতীয় শাসক। তিনি ছিলেন পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের ছেলে। পৈত্রিক রাজত্বের সীমানা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি পাল সাম্রাজ্যকে উত্তর ও পূর্ব ভারতের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতেও পরিণত করেন দ্বিতীয় ধর্মপাল।
বর্তমান জলঢাকা উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তিনি রাজধানী স্থাপন করেন। বহিঃশক্রর হাত থেকে রার জন্য তার প্রাসাদের বাইরে মাটির উঁচু প্রাচীর দ্বারা তিনি তার রাজধানীকে বেষ্টিত করেন। সেই থেকে স্থানটির নাম হয় ধর্মপালগড়।
ধর্মপালের রাজত্বকাল ছিল আনুমানিক ৭৮১-৮২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তার রাজত্বকালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ত্রিপীয় যুদ্ধ। উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দাণিাত্যের রাষ্ট্রকূট এবং মালব ও রাজস্থানের গুর্জর-প্রতীহারদের সঙ্গে বাংলার পালগণ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্থাপনাটি দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে কয়েক হাজার লোক ভিড় জমাচ্ছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানটিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2432670925617312589

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item