জলঢাকায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনে জেএমবি কানেকশনের অভিযোগ
https://www.obolokon24.com/2016/01/jaldhaka_27.html
বিশেষ প্রতিনিধি॥
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ ১৭ জানুয়ারী সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এমন একটি ওয়াজ মাহফিল ঘিরে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ মতে উক্ত ওয়াজ মাহফিলটি গত বছরের ২৩ নবেম্বর অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু জেএমবি সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ থাকায় পুলিশ ওই মাহফিলের অনুমতি প্রদান করেনি। এলাকাবাসী জানায় উক্ত ওয়াজ মাহফিলটির আয়োজন করেছে পূর্বের আয়োজক জলঢাকা উপজেলার মধ্যকাজিরহাট মহিলা হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিম খানার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মোঃ আনোয়ার হোসেন।
এদিকে এই ওয়াজ মাহফিলটি অনুষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান হাবিব। তার ভুমিকাও যেন রহস্য। একটি সুত্র জানায় গত শুক্রবার (১৫ জানুয়ারী) সকাল ১১টায় জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান হাবিব সরকারি লাল গাড়ীটি নিয়ে রংপুর জেলা গঙ্গাচড়া উপজেলার কচুয়ায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসায় যান। তার সাথে একই গাড়িতে করে সেখানে যায় উক্ত ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন পল্লী চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন ও কৈমারী ইউপি চেয়ারম্যান কহিনুর ইউএনও সেখানে বিকাল পর্যন্ত অবস্থান করে বিকালে জলঢাকা ফিরেন।
ইউএনও ওয়াজ মাহফিলে কোন জঙ্গী কানেশন নেই বলে দাবি করে বলেন তিনি ওই ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিবেন।
এলাকাবাসী জানায় ২০১৫ সালের ২৩ নবেম্বর তার এই ওয়াজ মাহফিলটি হবার কথা ছিল। তখন প্রধান অতিথি হিসাবে পোষ্টারে নাম ছাপা হয়েছিল নীলফামারী ৩ (জলঢাকা- কিশোরীগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার। উদ্ধোধকের স্থানে নাম প্রকাশ করা হয় বিশিষ্ট শিল্পপতি মেজর (অবঃ) রানা মোঃ সোহেলের। শুভেচ্ছা বক্তব্যে নাম প্রকাশ করা হয় জলঢাকা পৌরসভার সাবেক মেয়র ইলিয়াছ হোসেন বাবলু। বিশেষ অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বিভিন্ন স্থরের প্রায় দুই শতাধিক নেতৃবৃন্দের নাম প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি কিছু নতুন নামের এনজিওর প্রতিনিধিদের নাম রাখা হয়। সেই সাথে ওয়াজ যারা করবেন তাদের নামও পোষ্টারে ছাপানো হয়। যেমন শাইখ আব্দুল মালেক মাদানী, শাইখ সাইফুজ্জামান সালাফী ও শাইখ মনোয়ার হোসেন। ফলে জঙ্গী সংশ্লিষ্টরা অভিযোগে ওই ওয়াজ মাহফিলের অনুমোদন দেয়নি পুলিশ।
এবার ১৭ জানুয়ারী ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজন করা হয়েছে তা পুনরায়। এবারের পোষ্টারে পূর্বের আয়োজনের প্রধান অতিথি, উদ্ধোধক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নাম ঠিক রেখে ওয়াজ যারা করবেন তাদের নামের আগে ও পরে শাইখ এবং সালাফী টাইটেলটি বাদ দিয়েই ওই নাম গুলো পুনরায় ছাপানো হয় পোষ্টারে। এলাকার সচেতন মহল জানায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) কর্তৃক দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার পর জলঢাকা উপজেলা ঘিরে জেএমবির একটি শক্ত ঘাটি চিহিৃত করেছিল তৎকালিন নীলফামারীর পুলিশ সুপার বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।সে সময় তার নেতৃত্বে জলঢাকায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক জেএমবি সদস্য গ্রেফতার এবং দায়ের করা হয় মামলা। ওই সব মামলায় এখনও কারাভোগ করছে গ্রেফতারকৃতরা। সম্প্রতিকালে জেএমবি পুনরায় মাথা চারা দিয়ে উঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলে। সেই আলোকে জলঢাকা উপজেলায় জেএমবি নতুন কৌশলে ঘাটি গড়ছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জলঢাকা উপজেলার সাধারন মানুষজনের মাঝে।
এ ব্যাপারে নীলফামারী ৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি বলেন ১৭ জানুয়ারী জলঢাকায় ওয়াজ মাহফিলে তাকে প্রধান অতিথি করার বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি বলেন গত বছর ২৩ নবেম্বর জেএমবি সংশ্লিষ্টার অভিযোগে ওই ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এবারও ওই মাহফিল ফের হচ্ছে সেটিও তিনি জানেন না। অপর দিকে আয়োজন পল্লী চিকিৎক আনোয়ার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হয়। তিনি বলেন একটি মহল ওয়াজ মাহফিলটি বন্ধের জন্য মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে জেএমবির অভিযোগ তুলেছে। যা আদৌ সত্য নয়। জলঢাকা থানার ওসি দিলওয়ার হাসান ইনামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন জঙ্গী কানেকশনের অভিযোগে গত বছরের (২০২৫) ২৩ নবেম্বরের ওয়াজ মাহফিলের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এবার ১৭ জানুয়ারী ওই ওয়াজ মাহফিলের জন্য মৌখিক অনুমোতি চাওয়া হয়েছে। তবে পূর্বের ও বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়টি তদন্ত পূর্বক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।