ভূমিকম্পের আগাম আঁচ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা!

তাহমিন হক ববি॥
ভারতের কোন এক অংশ হতে যে  ভূমিকম্প হয়ে বিপর্যয় আসতে চলেছে তার আগাম আঁচ গত পাঁচ দিন আগেই টের পেয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা।  তাঁদের আশঙ্কাকে সত্যি করেই আজ সোমবার (৪ জানুয়ারী) জোরাল   ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মণিপুর-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশ । বিজ্ঞানীদের মতে  ভূমিকম্পে আগাম আন্দাজ পেরেছিলেন এই কারনে যে,   ভূমিকম্পের আগেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারের একেবারে নীচের স্তরে ব্যাপক আলোড়ন হয় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর। এই আয়নোস্ফিয়ারের একেবারে নীচের স্তরটির নাম ‘ডি লাইন’। “সাধারণত দিনের বেলায় সূর্য উঠলে আমাদের বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে ইলেকট্রন কণার ঘনত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু  ভূমিকম্প হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে ইলেকট্রনের সংখ্যা বা ঘনত্ব অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। তা সে রাত হোক বা দিন। ভূমিকম্পের  এক সপ্তাহ আগে যখন ভূস্তরের টেকটনিক পে¬টের মধ্যে সংঘর্ষের প্রস্তুতি শুরু হয় তখনই ভূগর্ভে জমা বিপুল পরিমাণ শক্তি বেরিয়ে আসে নিষ্ক্রিয় র‌্যাডন গ্যাসের মাধ্যমে। ওই গ্যাসই বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে ইলেকট্রনের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় অস্বাভাবিক ভাবে। তার ফলে রেডিও সিগন্যালগুলোর মধ্যে প্রচণ্ড আলোড়নের সৃষ্টি হয়। সেই আলোড়ন মেপেই বিজ্ঞানীরা  ভূমিকম্পের আগাম আঁচ করতে পারে।” তিনি আরও জানান, গত বছর নেপালের  ভূমিকম্পেরও আগাম আঁচ করতে পেরেছিলেন তাঁরা। সুত্র মতে মালদহ-মেদিনীপুরে রেডিও সিগন্যাল মাপার জন্য যে ভেরি লো ফ্রিকোয়ন্সি সেন্টার রয়েছে তারা ২৯ ডিসেম্বরেই রেডিও সিগন্যালে অস্বাভাবিক আলোড়ন লক্ষ্য করেছিল।

ভু-কম্পনে ভারতের মণিপুরে  নিহত ৮, বাংলাদেশে ৫ ঃ-আজ সোমবার (৪ জানুয়ারী) ভোরে ভারতের মণিপুরে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৮ জন। অপর দিকে বাংলাদেশে আতঙ্কিত হয়ে মারা যান ৫ জন। এ ছাড়া আহত ও অসুস্থ হয়েছেন সহ¯্রাধীক ব্যাক্তি। 
মার্কিন ভূ-বিজ্ঞান সর্বেক্ষণ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ওই ক¤পনের মাত্রা ছিল ৬.৭। ক¤পনের উতসস্থল মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার পশ্চিমের তমেঙলং। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার গভীরে ওই উতসস্থল। কয়েক সেকেন্ডের ওই ভূমিক¤েপ এখনও পর্যন্ত মলিপুরে  আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সেখানে আহত হয়েছে অন্ত ৫৮। বাংলাদেশে মারা গিয়েছেন ৫ জন।
ভূমিক¤েপর প্রভাবে কেঁপে ওঠে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত-সহ প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারও। রাজধানী ঢাকা-সহ ক¤পন অনুভূত হয়েছে প্রায় গোটা বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া জুড়ে। ভূমিক¤েপর পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে লেখেন, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে রাজ্যের খবর নিয়েছি।” এ দিনের ভূমিক¤প গত বছরের নেপাল ভূমিক¤পকে উসকে দিয়েছে। গত বছর সে দেশে ভূমিক¤েপর পর ভূ-বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের পালা আসতে চলেছে।
সেই আশঙ্কাই সত্যি করে এ দিন ভোরে কেঁপে উঠল মণিপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা। ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির নীচে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেট একে অপরের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। এক একটা সময়ে এই দুটি প্লেট একটি অন্যটির উপর পিছলে গেলে প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। তারই ফল ভূমিক¤প। তাঁদের মতে, মণিপুরের ওই অঞ্চলটি ভূমিক¤পপ্রবণ। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, নেপালের ভূমিক¤েপর সঙ্গে এ দিনের ক¤পনের একটা ফারাক রয়েছে। বিজ্ঞানিদের মতে “নেপালের ক্ষেত্রে একটি প্লেট আর একটি প্লেটের তলায় ঢুকে গিয়েছিল। মণিপুরের ঘটনাটি মনে হচ্ছে, একটি প্লেট আর একটি প্লেটের থেকে দূরে যাওয়াতেই এই ঘটনা। একটা বড় ভূমিক¤েপর পরে গোটা অঞ্চলে পর পর অনেকগুলি ভূমিক¤েপর আশঙ্কা থাকে। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এক বার কেঁপেও ওঠে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত। তবে তার মাত্রা ছিল অনেক কম। মণিপুরে উদ্ধারকার্যে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দুটি দলকে পাঠানো হয়েছে। আরও ১২টি দলকে তৈরি রাখা আছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। গোটা এলাকায় বিদ্যুত এবং টেলিফোন পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।ভোরে ভূমিক¤েপর সময় বেশির ভাগ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। অনেকেই কাঁপুনি টের পেয়ে আতঙ্কে রাস্তা বেরিয়ে পড়েন। রাস্তাঘাট-সহ প্রচুর বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত বছরের ২৫ এপ্রিলে ভয়াবহ ভূমিক¤প হয়। কাঠমান্ডু থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নির্জন পাহাড়ি এলাকায় মাটির ১১ কিলোমিটার গভীরে ওই ভূমিক¤েপর উৎসস্থল ছিল। ওই ভূমিক¤েপ ৫ হাজারের অধিক  মানুষ মারা যান। গৃহহীনও হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।
এদিকে ভু-কম্পনে বাংলাদেশে যে ৫ জন নিহত হয়েছেন তারা হলেন  রাজধানীর পূর্ব জুরাইন এলাকার আতিকুর রহমান আতিক (২৭) ও রাজশাহী  বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রধান বাবুর্চি খলিলুর রহমান (৩৮) ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ব্যবসায়ী নুর ইসলাম কন্দু (৫০)। সিরাজগঞ্জ জেলার কেলকুটি উপজেলা বওড়া গ্রামের আবুল কাসেম(৪০) ও পঞ্চগড় জেলা শহরের পূর্ব জালাশী মহল্লার তহমিনা বেগম(৫৫)।


পুরোনো সংবাদ

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি 7278825321631346878

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item