নূরের গাড়িবহরে হামলার দুই বছর পূর্তি

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১৪ ডিসেম্বর॥
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বিএনপি জামায়াতের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমরাও বিরোধী দলে ছিলাম। সেদিন মানুষ হত্যা করিনি আমরা। থানা আক্রমণ আর পুলিশ হত্যা করিনি।’ নীলফামারীতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা ও চার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যা ঘটনার দুই বছর পূর্তিতে আজ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর)বিকেলে রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টুপামারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি একথা বলেন।ওই বর্বর হামলা এবং হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে নুর বলেন,‘সেদিন আমাদের কি অপরাধ ছিল ? আমরা ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম। বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলাম। সেটিই কি ছিল আমাদের অপরাধ?
দিনটিকে স্মরণ করে নুর বলেন,‘আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে  পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাংলার শ্রেষ্ট সন্তানদের হত্যা করে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল বাঙ্গালী জাতী কে। আর ২০১৩ সালের এই দিনে  রামগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে কণ্ঠ রোধ করতে চেয়েছিল স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের জামায়াত শিবির।এরআগে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের নিহত ওই চার নেতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে পারিবারের খোঁজখবর নেন এবং নিহতের কবর জিয়ারতে অংশগ্রহন করেন। এসময় মন্ত্রী স্বজনদের সংগে কথা বলে শান্তনা প্রদান করেন। পরে তিনি ওই স্মরণ সভায় যোগ দেন। স্মরন সভায় টুপামারী  ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম শাহের সভাপতিত্বে বক্তৃতা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি অক্ষয় কুমার রায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলিমুদ্দীন বসুনিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুজার রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুর রহমান, জেলা যুবলীগের সভাপতি রমেন্দ্র নাম বর্ধণ প্রমুখ।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালে ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হবার রাতে নীলফামারী জেলা সদরের লক্ষীচাপ ও পলাশবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপি। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে বিকেলে শহরে ফেরার পথে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে তাঁর গাড়িবহরে হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের হামলায় টুপামারী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন, ও আওয়ামী লীগ কর্মী লিটন হোসেন লেবুসহ অপর পথচারী আবুবক্কর ছিদ্দিক নিহত হয়। এদের মধ্যে ফরহাদ ও মুরাদ দুই সহোদর।
এঘটনায় মামলা দায়ের হলে ২০১৪ সালের ১১ মার্চ ২১৭ জনের নামে আদালতে চার্জসিট দাখিল করেন। ওই আসাসমীদের মধ্যে বর্তমানে হাজতে আছেন ৭৮ জন। আদালত থেকে জামিনে আছেন ৫৬ জন এবং পলাতক আছেন ৮৩ জন বলে পুলিশ জানায়।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান পাশা বলেন,‘পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’দ্রুত বিচারের দাবি নিহতের স্বজনদের
স্বজনদের অভিযোগ, আলোচিত ওই হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই দুই বছরেও। ঘটনার এক বছর পেরিয়ে পুলিশ ২১৭ জনের নামে আদালতে চার্জসিট দাখিল করলেও বাদ পড়েছে অনেক উল্লেখযোগ্য আসামী। এদের মধ্যে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দম্ভের সঙ্গে।
হামলায় নিহত দুই সহোদর টুপামারী ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা ফরহাদ হোসেন (২৮) ও মুরাদ হোসেনের (২৫) বাবা ফারুক হক শাহ বলেন,‘ঘটনার দুই বছর অতিবাহিত হলেও মামলার তেমন অগ্রগতি দেখছি না। সন্তানের হত্যাকারীরা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার চারিপাশে। অপরদিকে খুনেরসাথে জড়িত অনেক বাদ পড়েছে পুলিশের তদন্তে। তারা এখন দম্ভ ছড়িয়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছে আমাদেরকে। আমি দ্রুত ওই হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি।’
অপরদিকে দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় কাঁদছেন ফরহাদ-মুরাদের মা মেরিনা বেগম। দীর্ঘ দুই বছর ধরে চোখের জল গরিয়ে অপক্ষো করছেন তার সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচারের আশায়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,‘বাবারে আর কতদিন হইলে মোর ছ্ওায়ার হত্যাকারীর বিচার দেখিবার পারিম।’
টুপামারী ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম হত্যা মামলার বাদি তাঁর চাচাত ভাই রাশেদ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, অনেক আসামী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ দেখছে না তাদেরকে।আমরা সকলে ওই নারকীয় হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার দেখতে চাই।’
অপরদিকে আওয়ামী লীগ কর্মী লিটন হোসেন লেবুর বৃদ্ধা মা মরিয়ম নেছা তাকিয়ে আছেন ছেলে হত্যা বিচারের দিকে। ছেলে হত্যার ঘটনায় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে প্রশ্ন তুলে বলেন,‘আর কয় (কত) দিন লাগিবে বিচার হইতে।’
পুলিশ সূত্রমতে, ওই মামলায় চার্জসিট দাখিলের পর আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করে আদালত। এদের মধ্যে ৭৮ জন বর্তমানে জেলহাজতে এবং ৫৬ জন রয়েছেন আদালত থেকে জামিনে। বাকি ৮৩ জন রয়েছেন পলাতক।
পুলিশের দায়েরকরা মামলার প্রধান আসামী  লক্ষীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম রব্বানীর লাশ উদ্ধার হয় ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারী সকালে। অপরদিকে মামলার অজ্ঞাত আসামী টুপামারী ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমান আতিকের লাশ উদ্ধার হয় ২০ জানুয়ারী। এরপর
ঘটনার রাতে পুলিশের পক্ষে নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বাবুল আকতার বাদি হয়ে লক্ষীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানীকে প্রধান আসামী করে নামীয় ১৪ জনসহ দেড় হাজার জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে টুপামারী ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী হত্যার ঘটনায় তাঁর ছোটভাই রাশেদ চৌধুরী বাদি হয়ে নামীয় ৮৬জনসহ অজ্ঞাত দেড় হাজার জনের বিরুদ্ধে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক একই ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলা একত্রে তদন্ত করে পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। পুলিশ ২০১৪ সালের ১১ মার্চ ২০৭ জনের নামে আদালতে চার্জসিট দাখিল করেন। আরও আসামী বাদ পড়েছে মর্মে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ্অ্যাডভোকেট আলিমুদ্দীন বসুনিয়া আদালতে একটি আবেদন করলে আরও ১০ জন যুক্ত হয় ওই মামলায়।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল খায়রুল আনাম ও সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবু হেলাল। আদালতের গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তারা পুলিশের চোখ এড়িয়ে দুজনেই রয়েছেন পলাতক। মামলার এমন গতিতে ক্ষুদ্ধ স্বজনসহ এলাকার সাধারণ মানুষ।
২০১৩ সালে ১২ ডিসেম্বর রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হবার রাতে নীলফামারী জেলা সদরের লক্ষীচাপ গ্রামে হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপি। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে শহরে ফেরার পথে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে গাড়িবহরে হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের হামলায় টুপামারী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন, ও আওয়ামী লীগ কর্মী লিটন হোসেন লেবুসহ পথচারী আবুবক্কর ছিদ্দিক নিহত হয়। এদের মধ্যে ফরহাদ ও মুরাদ দুই সহোদর।
মামলায় তিন আসামীর লাশ উদ্ধার
 মামলার তিন আসামীর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পুলিশের দায়েরকরা মামলার প্রধান আসামী গোলাম রব্বানীর লাশ ২০১৪ বছরের ১৮ জানুয়ারী সকালে জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের নীলফামারী-ডোমার সড়কের গোচামারী ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ২০ জানুয়ারী সৈয়দপুর বাইপাস সড়কের ধার থেকে টুপামারী ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম আতিকের লাশ উদ্ধার হয়। এরপর শিবির কর্মী মহিদুল ইসলামের (২৬) লাশ উদ্ধার হয় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা থেকে। ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারী অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই লাশ উদ্ধার করে দাফন সম্পন্ন হয়। সে লাশের ছবি দেখে ওই বছরের ৪ মার্চ মহিদুলকে সনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা। মহিদুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের (ফার্সি) মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র এবং সে সময়ে মামলার অজ্ঞাত আসামী ছিলেন।





পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2007718671859961827

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item