নীলফামারীর বিলুপ্ত ছিটমহলে প্রথম বিজয় দিবস পালিত

জয়নাল আবেদিন,গয়াবাড়ি,ডিমলা প্রতিনিধি এবং ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী॥
বিলুপ্ত ছিটমহলের সকলেই নব্য নাগরিক। এর মধ্যে কেউ বয়সে নবীন, আর কেউ প্রবীন। প্রবীণদের অপেক্ষা ছিল দীর্ঘ ৬৮ বছরের। আর নবীনদের অপেক্ষা জম্মের পর থেকে। কবে একটি দেশের নাগরিক হয়ে পালন করতে পারবে সেদেশের বিজয় দিবস। বুধবার শেষ হয়েছে বাংলাদেশের নব্য নাগরিকদের সে অপেক্ষার পালা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে  নীলফামারীর চার ছিটমহলের ৫৩৯ নাগরিক উদযান করেছে মহান বিজয়ের দিনটিকে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বুধবার সকাল থেকে নামে নীলফামারীর সদ্য বিলুপ্ত খারিজা গিতালদহ ছিটমহলে ওই নব্য নাগরিকদের ঢল। এ যেন এক উৎসাহের মিলন মেলা। শিশু বৃদ্ধসহ সকল বয়সের নাগরিক মেতে উঠে প্রাপ্তির বাধভাঙা উচ্ছাসে। তারা সেখানে পালন করেন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা। সুর্যদোয়ের পর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ঘটে দিনের সূচনা। এসময় মহান স্বধীনা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন সেখানে। বেলা ১০টার পর থেকে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগীতা। সন্ধ্যায় আলোচনা সভা, বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান অনিুষ্ঠিত হয়।
এসকল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইবনে ফয়সাল মুন, টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন, ছিটমহলের নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির নেতা মিজানুর রহমান, রফিুকুল ইসলাম, আব্দুল খালেক ও ফরহাদ হোসেন প্রমুখ। সভায় সভাপত্বি করেন বিলুপ্ত ছিটমহলের প্রবীন নাগরিক মতিয়ার রহমান।
এসময় বিলুপ্ত গিতালদহ ছিটমহলের নাগরিক মতিয়ার রহমান (৭০) বলেন, ৬৮ বছর পর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছি আমরা। নাগরিক হয়ে দেশের পতাকা পেয়েছি। আজ সে আনন্দে আমারা দেশের বিজয় দিবসটি পালন করছি।
বিলুপ্ত ২৯ নম্বর বড়খানকি খারিজা গিতালদহ ছিটমহলের নামকরণ করেছেন নয়া বাংলা। ওই গ্রামের মিজানুর রহমান (৬০) বলেন,‘ছিটমহলে থেকেও ১৯৭১ সালে আমার বাবা হামিদুর রহমান অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্ত আমরা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারিনি। দীর্ঘ ৪৪ বছর আজ একটি বিজয় দিবস পালন করতে পেরে আজ মনে পড়ছে আমার বাবার কষ্টট সার্থক হয়েছে।’
তিনি বলেন,‘দেশ স্বাধীনের দুই বছর পর আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। বাবা বেঁচে থাকলে আজকের দিনটিতে অনেক খুশি হতেন।’
এমন আনন্দের অনুভুতি থেকে পিছিয়ে নেই গ্রামের নারীরা। সকলের আনন্দে তারা উচ্ছসিত। বিলুপ্ত দোহলপাড়া ছিটমহলের জয়গুণ বেওয়া (৭৮) বলেন,‘দেশ স্বাধীনের সময় আমাগোরে ধইরা নিয়া বাইন্ধা রাহে রাজাকারেরা। আমাগো স্বামী (জামর আলী) আর হেই সময়ের  ১১ বছরের ছেলে জয়নাল আবেদীনডার ওপর নির্যাতন চালায় হেরা। বাড়ির হগ্গল মালামাল লুট করে হেরা। হেগোরে নির্যাতনে হাতের একডা আঙ্গুল হারিয়েছিল স্বামী। হেরপর দ্যাশ স্বাধীন হলো। কিন্তু আমাগো মুক্তি হলো না। বিজয়ের স্বাদও পেলাম না। এহন আমাগো গ্রামে (ছিটমহলে) বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে হগলে অনন্দ করছে। দেইখা আমার খুব ভালা লাগতাছে।’
ওই উচ্ছাসে পিছিয়ে নেই শিশুরা। তারা দিনটিকে উপভোগ করেছে অনেক হই-হল্লা করে।  অনুষ্ঠান স্থলে এসে শিশু আয়শা খানম (৯) বলেন,‘ খেলা খেলছি। বন্ধুদের দিয়ে অনুষ্ঠান দেখছি। আমার খুব ভালো লাগছে।’
অপর শিশু আবুল কাশেম (১২) বলেন,‘আমরা মুক্তি যুদ্ধের কথা শুনেছি। বিজয় দিবস পাশের গ্রামে পালন করতে দেখেছি। আজ আমরা নিজেরাই পালন করছি। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে আজ।’

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7455050465515723936

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item