যে খানে রয়েছে ৪ শত শহীদের লাশ অযত্ন আর অবহেলায় জলঢাকার কালিগঞ্জ বধ্যভূমি

মর্তুজা ইসলাম জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি

নীলফামারীর জলঢাকার ঐতিহাসিক স্থান কালিগঞ্জ বদ্ধভুমি। উপজেলা শহর হতে ৮ কিলোমিটার দুরে গোলনা ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়কের পার্শ্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার হাতে  নির্মম ভাবে হিন্দু পরিবারের বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৪শ জনের প্রাণ হারানোর ঐতিহাসিক স্থান কালিগঞ্জ বধ্যভুমি। সেই বদ্ধভুমিতে তাদের স্বরনে স্মৃতি স্তভ নির্মান করা হলেও অযতœ আর অবহেলায় পরে আছে এই বধ্যভূমি, যা দেখার কেউ নেই। প্রতিবছর বিভিন্ন দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অনেক কথাই বলেন  কর্তা ব্যাক্তিরা। চলে গেলে তা ভুলে যান তারা। বদ্ধভূমির স্মৃতি স্তভের উপর  উল্লেখ রয়েছে ৭৮ জনের নাম। সজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, বদ্ধভূমির চার পার্শ্বে ময়লা আবর্জনা,পাতা,মলমূত্রত্যাগ, ও সামনে মাংস ব্যাবসা, বাসের টিকিট কাউন্টার, নাম ফলকে পাতা ময়লা দিয়ে ভর্তি, যা এক অস্বাস্থকর পরিবেশ বিরাজ করছে । স্বাধীনতা পরবর্তী  সময় থেকে আজ পর্যন্ত বদ্ধভুমির স্থানটি  সংস্কার ও মেরামত  না করার ফলে অযন্ত আর অবহেলায় পরে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। জাতীয় সংসদের তৎকালীন চিফ হুইফ আব্দুর রউফ উক্ত স্থানে এসে পরিদর্শন করে বধ্যভূমি হিসাবে কালিগঞ্জকে চিহ্নিত করে নাম ফলক উন্মোচন  করেন। তারপর হতে মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস সহ বিভিন্ন দিবসে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিয়েই অনেকেই দায় শেষ করেন।  আর নিরবে পরতে থাকে সজন হারানো অনেকের অশ্র“।সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ হেমন্ত শীলের পুত্র কমলাকান্ত শীল এ প্রতিবেদককে জানান, ‘সেদিন ছিল ৭১সালের ২৭ এপ্রিল  । চারদিকে বাজছে যুদ্ধের বাজনা। আমরা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বালাগ্রাম হতে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ভারতে সরনার্থী হয়ে যাওয়ার পথে কালিগঞ্জে জড়ো হই। কিন্তু সেখানে আমাদের বাধা হয়ে দাড়ায় পাশ্ববর্তী ডোমার থানা হতে ৭টি গাড়ীতে আসা পাক খান সেনারা । তারা নেমেই ছেলে বুড়ো, শিশু মহিলাদের আলাদা করে। তারপর বুড়ো ও যুবকদের একসাথে সারিবদ্ধ করে দাড় করায় ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সে সময় আমি শিশুদের দলে থাকায় দুর থেকে দেখেছি সে দৃশ্য ও আমার পিতার মৃত্যুকালীন ছটফটানী। পরে মানুষের সাথে ভারতে চলে যাই। নয় মাস পর দেশ স্বাধীন হলে ফিরে আসি এবং দেখি আমাদের ভিটেমাটি সব জাল দলিল ও দখল করে মানুষ বসবাস করছে’। সেই সময়ে যুবকদের দল হতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া শহীদ অশ্বিনী অধিকারীর পুত্র অমর অধিকারী বলেন, সেই দিন কালীগ্েঞ্জর এই যায়গায় গুলি হবার সাথেই আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞ্যান ফিরে এলে দেখি আমার সারা গায়ে হালকা মাটিচাপা। প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছিল। তারপর পা নাড়তে গিয়ে দেখি নড়েনা। আমার গোঙানীর শব্দ শুনে এলাকার লোকজন এসে আমাকে মাটির নিচ হতে উদ্ধার করলে দেখতে পাই পায়ে গুলি লেগেছে। সেই গুলি বের করলে ভালো হই। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সমবেদনা স্বরূপ ১৮ডিসেম্বর ৭২ইং সালের একটি চিঠি মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ও কল্যাণ তহবিল হতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে মহকুমা প্রশাসকের নিকট হতে এক বান্ডিল টিন ও ৫শ টাকা করে  ৪টি চেক পাই। এই ছিল আমাদের শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি’। এলাকাবাসীর দাবী স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক সেনাদের হাতে  নারকীয় হত্যাকান্ডে নির্মম ভাবে হিন্দু পরিবারের বিভিন্ন বয়সী প্রাণ হারানোর ঐতিহাসিক স্থান কালিগঞ্জ বদ্ধভুমির স্থানটিতে একটি কমপ্লেক্স ও আধুনিক স্মৃতি স্তভ নির্মান করার  দাবী জানান।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1750085581646959002

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item