সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা , চিলাহাটি-হলদিবাড়ি আইসিপি ও রেল যোগাযোগ চালুর দাবি

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ৩০ নভেম্বর॥
এপার বাংলা ওপার বাংলার দুই বাংলার  লাখো মানুষের ঢল নেমেছে নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্তে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এপার (বাংলাদেশ) ও ওপারে (ভারত) বসবাসকারীদের মধ্যে চোখের দেখা আর কথা বলার মিলন মেলার হাট বসেছিল। দীর্ঘ ৭ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে নারী- পুরুষ- শিশু ও আবাল বৃদ্ধ বনিতার আনন্দের অশ্রুধারা যেন এপার ওপারের আতœীয়স্বজনদের চোখ দিয়ে বয়ে যায়।  এ সময় ভারতের হলদিবাড়ির মানুষজনের হাতে হাতে শোভা যায় পুনরায় হলদিবাড়ি-চিলাহাটি আইসিপি(ইমিগ্রেশন) খুলতে হবে, পুনরায় হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথ চালু করতে হবে লিখনির প্লেকাড-ফেষ্টুন ও ব্যানার। 

প্লেকাড হাতে নিয়ে থাকা ভারতের হলদিবাড়ির সমসের আলী সরকার বলেন   ২০০৪ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ইমিগ্রেশন চালু ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সে সময় বিএনপি সরকারের সময় এটি বন্ধ হয়ে যায়। এটি পুনরায় চালুর দাবি নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। পাশাপাশি আতœীয় স্বজনদের সাথে দেখা করছি।
এদিকে এই মিলনমেলা চলে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। ডোমারের ভোগডাবুড়ি গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ ধনির উদ্দিনের প্রায় ৪০ বছর পর দেখা হয় ভারতের হলদিবাড়ির প্রধানপাড়ায় বসবাসকৃত ছোট বোন আম্বিয়ার সাথে। কাটাতারের বেড়ার ফাকে বসে দুই ভাইবোনের কান্নার আহাজারী ছিল। বাংলাদেশের বসবাসকৃত ভাই ছোট বোন কে তিনটি ইলিশ মাছ দিতে পেরেছেন। অপর দিকে ছোটবোন ভাইকে দিয়েছে লুঙ্গি। দুই ভাইবোনের মধ্যে কথা হলেও কেউ কাউকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারেনি।
কুড়ি  বছর পর দেখা হলো, কথা হলো। কিন্তু  কাটাতারের ব্যবধানে এপার বাংলা ওপার বাংলার দুই ভাই আব্দুর কাদের (৬৫) ও সাইদুল ইসলাম(৬০) এর হাত ছোয়া হলোনা। অপর দিকে নানা-নানী -নাতিকে ছুয়ে আদর করতে পারলো না। একইভাবে নাতি স্কুল শিক্ষক তাসকিনুল সরকার (৪৫) পারলেন নানা-নানীর হাত ধরতে। তবে উপহার হিসাবে তারকাটার উপর দিয়ে বিনিময় হলো ইলিশ মাছ,শাড়ী- কাপড়,কমলা আপেল ,বিস্কুট চানাচুর। এসময় তার কাটার এপারে দাঁড়িয়ে  ওপারে স্বজনদের দেখা আর কথা বলার সুযোগ পেলেও কেউ পানেরনি কাউকে ছুইতে।এই মিলন মেলায় শুধু নীলফামারী জেলার মানুষজন নয়,পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁও,রংপুর,লালমনিরহাট জেলার মানুষজন নীলফামারীর চিলাহাটি  ডাঙ্গাপাড়া থেকে পূর্ব সীমান্ত হয়ে দক্ষিন সীমান্তের গিড়িয়ারডাঙ্গা হিমকুমারী সীমান্ত পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সুত্র জানায়  চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বিলুপ্ত ছিটমহলের ৪৭৮ জন ভারত গমনের প্রেক্ষিতে এই  দুই বাংলায় বসবাসকৃত মানুষজনের আতœীয়স্বজনদের দেখা সাক্ষাৎ করার জন্য এই মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এতে দুই বাংলার  প্রায় দেড় লাখ মানুষজন সমবেত হয়েছিল।এদিকে মিলন মেলায় আসা পঞ্চগড় জেলার ভাউলাগঞ্জ গ্রামের বিধবা দিনেশ্বরী রায় (৬৫) জানান কুড়ি  বছর পর দেখা হলো, কথা হলো। কিন্তু  কাটাতারের ব্যবধানে ওপারের হলদিবাড়িতে বসবাসকৃত শিশিকুমার রায় দিদি পঞ্চমী রায়ের  হাত ছোয়া হলোনা। কান্না বিজরিত কন্ঠে তিনি জানান এপারে দাঁড়িয়ে  ওপারে স্বজনদের দেখা আর কথা বলার সুযোগ পেলাম। দীর্ঘ ২০ বছর পর ভাই ও বোনের সাথে দেখা হলো। তিনি ভাই ও বোন কে দুই টি ইলিশ মাছ দিয়েছেন কাটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে।
অপর দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের  খাগড়া বালাপাড়ার মৃত আছির উদ্দিনের ছেলে ওপারের হলদিবাড়ির বড়বাড়ি গ্রামের বসবাসকৃত সাইদুল ইসলামের এই মিলন মেলায় প্রায় ৩০ বছর পর দেখা । কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দুই ভাই। অপর দিকে ডোমারের মিরজাগঞ্জ গ্রামের স্কুল শিক্ষক তাসকিনুল সরকার দেখা করেন  নানা আমিনার রহমানের (৭৫) সাথে। তার নানা  ভারতের হলদিবাড়ি থানার হেমকুমারী  গ্রামে বসবাস করেন। তাদের (নানা নাতির) বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার মাত্র। কিন্তু সীমান্তের একটি তার কাটার বেড়া তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।
তাসকিনুল বলেন,‘৩০ বছর আগে নানা, নানিকে দেখেছিলাম। তাদের দেখার জন্য মনটা বড়ই ছটফট করে। বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকদের ভারতে পাঠানোর সময় গত চার দিন ধরে সীমান্তে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অবশেষে হঠাৎ দেখা পেলাম। কিন্তু তার কাটার বেড়ার বাধায় ছুইতে পারিনি নানি আর নানাকে।
স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে এসে ডোমার উপজেলার মিরজাগঞ্জ গ্রামের রশিদুল ইসলাম বলেন, এসময় দুই দেশের লাখো মানুষের সেখানে মিলন মেলা ঘটে।’ দুই দিকে হাজারো মানুষের ভীড় মাঝখানে কাঁটা তাঁরের বেড়া। এরই মাঝে দেখা ও কথা হয় ভারত ও বাংলাদেশের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে। এ সময় দীর্ঘদিন পর স্বজনের দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ কর্তৃপক্ষ সামান্য ওই সময়ের  মিলন মেলার সুযোগ দেন।এদিন বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সুত্র জানায় চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি সীমান্তে দুই বাংলার প্রায় দেড় লাখ মানুষজন জোড় হয়েছিল।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 8603302491680138626

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item