পুঁজি সংকটে ব্যাবসায়ি রংপুরে মৌসুমের প্রথম শুটকির নিলাম অবিক্রিত প্রায় অর্ধেক!

হাজী মারুফ

রংপুর বিভাগীয় নগরীর দর্শনা ঘাঘট পাড়ায় অবস্থিত ৫ একর জমির নিয়ে গড়ে উঠা একমাত্র শুটকি আড়তের ব্যবসায়িদের বর্তমানে ব্যস্ততার অন্ত নেই। শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা কে কার আগে বিভিন্ন প্রজাতের শুটকি মাছ দিয়ে দোকান সাজাতে পারবেন। তবে শেষ মূহূর্তে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবেন কী না এ আশংকাও কাজ করছে কিছু ব্যবসায়ির মাঝে। কারণ চলতি মাস থেকে শুরু হচ্ছে শুটকি মাছের মৌসুম। ইতোমধ্যে দেশের শুটকি প্রধান অঞ্চল থেকে মহাজনরা চাহিদার বিপরীতে মাল পাঠানো শুরু করেছেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ির অভিযোগ বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলো শুধু শুটকি ব্যবসায় সহজ শর্তে ঋণ দিলে তাদের পুঁজি সংগ্রহে কোন সমস্যা হতো না। এদিকে মৌসুমে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার শুটকি কেনাবেচা হলেও শুধু  সরকার বা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের পৃষ্টপোষকতার অভাবে  ২৮ বছর আগে শুরু হলেও আজো প্রতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি আড়তটি। ফলে  সম্ভাবনাময়ী শুটকি  আড়তটি এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।

জানা গেছে, রংপুর বিভাগে মোট শুটকি আড়ৎ আছে ৩ টি। এ গুলো হচ্ছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে, বাকী দুটির অবস্থান রংপুর জেলায়। তবে  মানের বিবেচনায় ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বিভাগীয় নগরীতে অবস্থিত ঘাঘট শুটকি আড়তের অবস্থান সকলের নীচে। আশির দশকে  ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে শুটকির  আড়তটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে এর ব্যাপ্তি ঘটেছে ৫ একর জায়গায়। শুরুর দিকে আড়তে প্রায় ৫০ জন ব্যবসায়ী  থাকলেও মুলধনের অভাবে বর্তমানে ২ জন আড়তদার সহ ব্যবসায়ী রয়েছে মাত্র ১৫ জন।
শুটকি আড়ৎ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার অনুষ্ঠিত হলো  এ  মৌসুমের প্রথম শুটকির নিলাম। ২ লাখ টাকা মূল্যের শুটকির প্রায় অর্ধেক এ বিক্রিত থেকেছে। ব্যবসায়িদের সূত্রে জানা গেছে, টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় অনেক ব্যবসায়ি  শুটকির ডাকে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। মৌসুমে সপ্তাহে নিম্নে ৪টি পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যের শুটকি নিলামে তোলা হয়।
 ব্যবসায়ি লুৎফর রহমান বলেন, শুটকি মাছের মৌসুম হচ্ছে মধ্য নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত  ৬ মাস। এখনও  মৌসুম শুরুর  থাকলেও বর্তমানে ব্যবসা করার মতো যথেষ্ট মূলধন তার কাছে নেই । কারণ গত ৪ মাস শুটকি না থাকায়  তিনি ধারদেনা করে বাড়ি খরচ এবং ২ জন কর্মচারীর খরচ জুগিয়েছেন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে বিভিন্ন পদের শুটকি মাছ কিনতে না পারলে পরে ব্যবসায় ঠিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
আজিজ, হাকিম এবং আজগার আলী সহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মূলধনের অভাবে এই আড়তটি জমে উঠছে না। তারা জানান বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলো শুটকি ব্যবসায় ঋণ দিলে তাদের ব্যবসার উন্নতি হতো পাশাপাশি আড়তে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো।
আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ শুটকি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের। এর বৃহৎ অংশ আসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনাম গঞ্জ, নেত্রকোণা, পাবনা, আত্রাই, ফরিদপুর ,গোপালগঞ্জ খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং রাজশাহীর চলন বিল এবং নাটোর সহ দেশের বিভিন্ন জেলার মাছ প্রধান এলাকা থেকে।  এছাড়া দেশি শুটকির পাশাপাশি  ভারতীয় (এলসি) শুটকি মাছ আসছে আড়তে।  ভারতীয় শুটকি দামে সস্তা হলেও দেশী শুটকির চেয়ে চাহিদা কম। আড়তে  কেনা বেচা হচ্ছে সামুদ্রিক শুটকি মাছের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফেসা, কইড়া, চান্দা, গাং কৈ,  লটকি,  মিতি চকলেট, কাচকি, পাতা, চেলা, অন্যতম। মাছের আকার এবং  সংরনের প্রকারভেদে একই শুটকি মাছের দামের মধ্যে বেশ তারতম্য দেখা যায়। চেলার কেজি ২শ থেকে ৩শ টাকা, কাচকি ১শ ৬০ থেকে ৩শ টাকা, ফেসা ১শ থেকে ৩শ টাকা, ধঞ্চা ৫০ থেকে ১শ ৫০ টাকা, লটকি ১শ ৬০ টাকা থেকে ৩শ টাকা, মিতি চকলেট ১শ দেকে দেড়শ টাকা। দেশী মাছের মধ্যে আছে পুটি বালিয়া ,বোয়াল ইসা অন্যতম। সামুদ্রিক এবং নদীর মাছ মিলে আড়তে  ৫০ থেকে ৬০ প্রকার শুটকি  আছে।
 একাধিক ব্যবসায়ি জানান, প্রতিদিন বুহত্তর রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীরা ছাড়াও লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং বগুড়ার ব্যাবসায়িরা শুটকি কিনতে এই আড়তে আসেন। 
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা বাজার থেকে  আড়তে পাইকারি দামে শুটকি কিনতে আসা ব্যবসায়ি টারজান ইসলাম বলেন, পাটগ্রাম বাজারে তার শুটকি মাছ বিক্রয়ের দোকান আছে। তাই প্রতি বছর শুটকির মৌসুম শুরুর দিকে এখান থেকে পাইকারি দামে শুটকি কিনেন। তিনি স্থানীয় চাহিদা বিবেচনা করে ৭০ হাজার টাকার গাং কৈ, ভেটকি, চকলেট এবং ইসা মাছের শুটকি কিনেছেন। এখান থেকে কেনা শুটকি তার এলাকায় নিয়ে যেতে গাড়ী খরচ পড়বে ২শ টাকা। তবে তিনি স্বীকার করেন যদি তিনি সৈয়দপুর অথবা তিস্তায় অবস্থিত শুটকি আড়তে যেতেন তাহলে আরো অনেক দোকান যাচাই করে শুটকি কিনতে পারতেন । কিন্তু  এতে পরিবহণ খরচ বেশি পড়ে যেত।
রংপুর শুকনা মাছ ব্যবসায়ি ুদ্র সঞ্চয় সমিতির  সাধারণ সম্পাদক এবং আড়তদার শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়িদের পুঁজি সংকটের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরেও ঘাঘট পাড়া শুটকি আড়তটি জমে উঠছে না। তিনি আরো বলেন, টাকার অভাবে অনেক ব্যবসায়ি শুটকির ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলো বিভিন্ন ব্যবসায় ঋণ দিলেও শুটকির ব্যবসায় কোন ব্যাংক ঋণ দেয় না। তবে দু’একজন ব্যবসায়ি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু তারা সকলে অন্য ভাবে প্রভাবিত করে ঋণ নিয়েছেন। যে পরিমাণ টাকা নিয়েছেন তার চেয়ে বেশি টাকার জমি বন্ধক দিতে হয়েছে। তিনি শুটকি ব্যবসায় ঋণের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের হস্তপে কামনা করেছেন ।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 3716249737432243882

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item