অনুসন্ধানী রির্পোট-ডিমলায় গৃহবধুর আতœহত্যা ॥ অপমৃত্যুর মামলা

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ৮নবেম্বর॥
রোজিনা আক্তার(২৫) নামের এক গৃহবধুর আতœহত্যার ঘটনায় ডিমলা থানায় রবিবার সন্ধ্যায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন ওই গৃহবধুর পিতা তৈয়ব আলী (ইউডি মামলা নম্বর ২৪ তারিখ ০৮/১১/২০১৫) ।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমখড়িবাড়ি কান্দাপাড়া গ্রামে ওই গৃহবধু পারিবারিক বিরোধে রবিবার সকাল ১০টার দিকে স্বামীর বাড়ির ঘরের দরজা লাগিয়ে পড়নের শাড়ী গলায় পেঁচিয়ে তীরের সাথে ফাস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে। বাড়ির লোকজন সহ প্রতিবেশীরা টের পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে রোজিনাকে নামিয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে আসছিল। পথে তার মৃত্যু হয়। এরপর ওই গৃহবধুর লাশ বাড়ির উঠোনে শুয়ে রেখে পুলিশ কে খবর দেয় স্বামী রফিকুল ইসলাম। দুপুরে ডিমলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল তৈরী করে থানায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সোমবার (৯ নভেম্বর) জেলার মর্গে রোজিনার লাশের  ময়নাতদন্ত করা হবে।
এদিকে ঘটনার পর পরেই নামে- বেনামে একাধিক ব্যাক্তি সাংবাদিকদের কাছে মুঠোফোন করে জানায় ঘটনাটি আতœহত্যা নয় হত্যাকান্ড। রফিকুল তার স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কড়া করে রির্পোট লিখবেন আপনারা রফিকুলকে বসন দিয়ে। যাতে ওই বেটা হাজতে যায়। এইবার টের পাবে রফিকুল কত ধানে কত চাল।
এ ধরনের খবর পেয়ে বেশ কিছু সাংবাদিক ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। গ্রামের সাধারন মানুষজন থেকে এলাকার বেশ কয়েকজন জানায় প্রকৃত পক্ষেই ঘটনাটি আতœহত্যা। তারা জানায় গ্রামের মৃত আলী আহম্মেদের ছেলে দিনমজুর রফিকুলের সাথে গত চার বছর আগে বিয়ে হয়েছিল পারভির আক্তার নামের এক নারীর। পারভিন ছিল রফিকুলের প্রথম স্ত্রী। সেই ঘরে রুমানা নামের তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। পারিবারিক কলহে পারভিন তার স্বামীর সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে অপর একজনকে বিয়ে করে মেয়ে সন্তান রুমানাকে রফিকুল কে দিয়ে যায়। এ অবস্থায় রফিকুল দ্বিতীয় বিয়ে করে একই ইউনিয়নের নাউতারা গ্রামের তৈয়ব আলীর  মেয়ে রোজিনা আক্তারকে। তাদের ঘরে রয়েছে দেড় বছরের মেয়ে রোকসানা।
বিয়ের পর রোজিনা তার সৎ মেয়ে রুমানাকে প্রথম দিকে নিজের মেয়ে হিসাবে দেখা শোনা করলেও যখন তার কোলে মেয়ে সন্তান আসে ঠিক তখন থেকে স্বামী রফিকুলের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে রুমানাকে ঠিকমত দেখাশোনা এবং খেতে না দিয়ে উপোষ রাখতো রোজিনা। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায় মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো। ঘটনার  আগের রাতে শনিবার রোজিনা তার সৎ মেয়ে রুমানাতে ভাত খেতে না দিয়ে উপোষ করে রাখে। এমন কি পরের দিন রবিবার সকালেও খেতে দেয়না। খিদের জ্বালায় রুমানা কান্নাকাটি করে তার বাবা রফিকুলের কাছে ঘটনাটি  বলে দেয়। এটি জানতে পেরে রফিকুল তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোজিনাকে গালমন্দ করে রুমানাকে খেতে দিতে বলে দিনমজুরীর কাজে বাড়ি থেকে বাহিরে চলে যায়। এ সময় বাড়িতে ছিল রফিকুলের বিধবা মা বৃদ্ধা শোভাতন বেওয়া ও প্রথম স্ত্রীর মেয়ে রুমানা। এ সময় রাগ করে রোজিনা তার দেড় বছরের মেয়ে রোকসানাকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পথে প্রতিবেশী ফরমান খানের স্ত্রী লালবানুর সাথে রোজিনার দেখা হলে লালবানু তাকে আটকিয়ে পুনরায় তার স্বামীর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। বাড়ির উঠোনে ওই লালবানু রোজিনার দেড় বছরের মেয়ে রোকসানা কে কোলে নিয়ে রোজিনার শাশুড়ির সাথে কথা বলছিল। এ সময় রোজিনা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষন পর গ্রামের ওই  লালবানু রোজিনা কে হাক ডাক দিয়ে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের বাঁশের বেড়ার ফাক দিয়ে দেখতে পায় রোজিনার দেহ গলায় ফাস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে। এই দৃশ্য দেখে লালবানু চিৎকার দিয়ে লোকজন জড়ো করে ঘরের দরজা ভেঙ্গে রোজিনার দেহ নামিয়ে ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে আসার চেষ্টা চালায়। এ সময় এক পল্লী চিকিৎসক ওই পথে যাওয়ার সময় রোজিনার দেহ পরীক্ষা করে মৃত্যু ঘোষনা করে। এরপর দিনমজুর রোজিনার স্বামীকে খবর দিলে সে বাড়িতে ছুটে আসে। সেই ডিমলা থানায় খবর দেয় তার স্ত্রীর আতœহত্যা করেছে।
এলাকাবাসী জানায় এই আতœহত্যা নিয়ে একটি মহল হত্যাকান্ড বলে চালিয়ে রফিকুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। কারন ওই পক্ষের সাথে রফিকুলের পরিবারের  পূর্বশক্রতার বিরোধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানায়, আমার পিতা আলী আহম্মেদের সাথে এলাকার জনৈক মামুন মাষ্টার,আব্দুল রশিদ, ইয়াছিন ,আমজাদ হোসেন,কিসমত আলী  ও আসমত আলী  সাথে জমি নিয়ে দ্বন্দ ছিল। এমন কি তার পিতার মৃত্যু ছিল রহস্যজনক।তাদের বিরুদ্ধে রফিকুলের মা শোভাতন একটি মামলা দায়ের করেছিল। ওই মামলার ঘটনাটি পরবর্তিতে প্রভাবশালীরা নষ্ট করে দিয়ে আসামীদের রক্ষা করে।  তারা ওই পূর্বের ঘটনাকে পুঁজি করে আমাকে (রফিকুল) বিপদে ফেলতে  মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে রফিকুলের দ্বিতীয় স্ত্রী রোজিনার বাবা  তৈয়ব আলী জানায় আমার মেয়ে রোজিনা আতœহত্যা করেছে খবর পেয়ে ছুটে আসি জামাই রফিকুলের বাড়িতে। অনেক জন অনেক কথা বলেছে। আমি পুলিশের সাথে কথা বলেছি। পুলিশ আমার মেয়ের লাশের সুরতহাল করে শরীরে কোথাও কোন আঘাত বা হত্যা  চিহৃ পায়নি। তাই আমি নিজে বাদী হয়ে ডিমলা থানায় একটি ইইডি মামলা দায়ের করেছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন আমি আমার মেয়ের লাশের কাটা ছিড়া করতে চাইনি। কিন্তু পুলিশ বলেছে এলাকার কিছু লোক এ নিয়ে স্বার্থ হাসিলে কোন ঘটনা ঘটাতে পারে তাই পুলিশ সকল অভিযোগ উর্ধ্বে রাখতে লাশের ময়না তদন্ত করবে। যা আমি মেনে নিয়েছি।
এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ডিমলা থানার এসআই তাজুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান ঘটনাটি আতœহত্যা বলেই প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে। লাশের সুরতহাল রির্পোটে শরীরে কোথাও কোন আঘাত বা হত্যা করার আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই এই লাশ নিয়ে কোন মহল বির্তক বা ফায়দা লুটতে না পারে  সে জন্য লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী রের্কড করা হয়। ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবেই জেনেছি। বির্তক এড়াতে ইউডি মামলা হয়েছে। সোমবার (৯ নভেম্বর) জেলা মর্গে লাশের ময়না তদন্ত করা হবে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4410719065237536693

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item