আবেদ চোরের সাতকাহন
https://www.obolokon24.com/2015/11/abed-chor.html
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী॥মর্তুজা ইসলাম,জলঢাকা প্রতিনিধি-
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এখনও তফশীল ঘোষনা না হলেও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব প্রার্থীরা নিজেদের ছবি সমেত পোষ্টার সাঁটিয়েছে প্রচারনার নেমে পড়েছে। কেউ প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে কেউ বা নিজের প্রচারনা লিপ্ত হয়ে পোষ্টার সাটিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে নিজ এলাকায় সাড়া ফেলেছেন এক কাউন্সিলার প্রার্থীর অভিনব পোস্টার। নীলফামারী জেলার জলঢাকা পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নিজেকে চোর স্বীকার করে আবেদ নামের এক ব্যক্তির ছবি সহ জলঢাকা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পোস্টার চোখে পড়ার মতো। সেই পোষ্টারে দোয়া চেয়ে লিখা হয়েছে রাজনীতি যার যার অধিকার সবার। আসন্ন পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের জন্য কৃষক শ্রমিক জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি ও ভোট চাই। ভোট না দিলে আপনাদের বাড়ি চুরি হলে আমাকে দায়ী করতে পারবেন না। আমি আবেদ চোর, জলঢাকা পৌরসভাবাসীকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন। প্রচারে ৬ নম্বর ওয়ার্ডবাসী। তার এই পোষ্টার এখন সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে হুহু করে শেয়ার করা হচ্ছে। যা রিতিমত চাঞ্চল্যকর অবস্থার মতো।
এদিকে যার চাল চুলা বা নিজের বাস্তভিটা পর্যন্ত নেই এমন একজন আবেদ চোরের ছবি সমেত পোষ্টার ছাপিয়ে সাঁটানো হয়েছে কেন এবং কি কারনে এই অসহায় ব্যাক্তিকে নিয়ে কারা হাসি তামাশা করছে এ নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।
আবেদ চোরের পরিবারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জলঢাকা পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়াডের মুদিপাড়া মহল্লার মৃত সামছুদ্দিন মিয়ার ৩ ছেলে ৬ মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী চতুর্থ। সে গাঁজা সেবন করে। বিয়ে করেছিল ছাবেতন নামের এক নারীকে। স্বামী আবেদের গাঁজা সেবন ও ছিচকে চুরির কারনে ১২ বছর পূর্বে ছাবেতন বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছে। আবেদের সংসারে ফাতেমা বেগম নামের একটি মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে ধান্ধা। তার এক মাত্র মেয়েটির বিয়ে দিতে আবেদ আলীর কোন চিন্তা চেতনাই মাথায় নেই। তার শুধু নিজের পেটে ধান্ধা ভাত পড়লেই শান্ত। আছে মাদকের নেশা। তাই আবেদের বড়ভাই মুরগী বিক্রেতা আশরাফ আলী তার ছোট ভাই আবেদ আলীর মেয়েটির বিয়ে দিতে এক হোটেল বয়ের সাথে নিকাহ রেজিষ্ট্রি করে রেখেছে গত ১৪ দিন আগে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের আয়োজনে ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। মেয়ের বিয়ের অর্থ জোগারে যখন পরিবারটির ত্রাহী অবস্থায়, ঠিক তখন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ছয় নম্বর ওয়াডের কাউন্সিলার পদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আবেদ চোরের ছবি সহ এলাকায় রঙিন পোষ্টার ছেয়ে গেছে। বৃদ্ধা মা আবেদা খাতুন ও মেয়ে ফাতেমা বেগম আবেদ চোরের পোষ্টারের কথা শুনে অবাক হয়ে যান। তাদের কথা যার চাল চুলা নাই সে কিভাবে নির্বাচন করবে। আবেদ আলীর বৃদ্ধা মা আবেদা খাতুনের অভিযোগ আবেদ তার নিজের মেয়ের ভরনপোষনা চালাতে পারেনা। সেখানে কিছু মানুষ আমাদের দুঃখ র্দূদশা না বুঝে মসকরা করেন। তিনি বলেন আবেদ চোর নয় সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে সে মানুষের দেয়া চোর উপাধী পেয়েছে। এক সময় ছিচকে চুরি করতো এখন ভ্যান চালায়।
আবেদ আলীর বড় ভাই মুরগী বিক্রেতা আশরাফ আলী জানান তার ছোট ভাই আবেদ আলী,এক সময় ঘটি বাটি, পুরানো ডেকচিপাতিল চুরি করে বিক্রি করে নেশা করতো। এলাকায় কোথাও বড় ধরনের চুরি হলে আ্েবদ কে আটক করে পুলিশ জেলে পাঠায়। কখনও আবেদ জেলে থাকা অবস্থায় এলাকায় চুরি হলে সেটিও আবেদ কে জড়ানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু আসল চোর ধরা পড়তো না। এ পর্যন্ত আবেদ ২৮ বার জেলে গেছে। কোরবানীর ঈদের দুই দিন আগে সে জামিন পায়। আবেদ এখন চুরি করেনা। তাকে একটা ভ্যান দেয়া হয়েছে সেটি চালিয়ে তার নিজের আয় হয়। পৌরসভার নির্বাচন ঘিরে আবেদকে নিয়ে যে পোষ্টার সাঁটানো হয়েছে তা তামাশা ছাড়া কিছু নয়। যা দেখে অবাক হয়েছি। আবেদের মেয়ের বিয়ের আয়োজনে ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে আবেদ নির্বাচন করবে কি ভাবে। তার অভিযোগ কোন মহল তার ভাইকে পুঁজি করে কোন ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে।
আবেদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাকে জলঢাকা এলাকার কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তার বড় ভাই জানায় সে সোমবার সকালে বাড়িতে ভ্যান গাড়ীটা রেখে কোথায় চলে গেছে তার কোন খোঁজ মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
আবেদ চোরের পোষ্টার নিয়ে জানা যায় ওই ওয়াডের এক ব্যবসায়ী সম্ভাব্য কাউন্সিলার প্রার্থীতা জানিয়ে এলাকায় পোষ্টার সাঁটিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীর পোষ্টারের পাশেই সাঁটানো হয়েছে আবেদ চোরের পোষ্টার। এলাকাবাসী জানায় জলঢাকা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়াডের বর্তমানে কাউন্সিলার নুর ইসলাম।