রংপুর চামড়াপট্টিতে চামড়া নেই ট্যানারি মালিকদের কাছে জিম্মি ব্যবসায়ীরা

হাজী মারুফ রংপুর ব্যুরো প্রধান :


সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় হাতে গোনা ট্যানারি মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রংপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে পশুর চামড়া ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পেরে অনেকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগীয় নগরীর একমাত্র চামড়াপট্টিতে (শাপলা চত্বর এলাকা) কোনো কর্ম চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় চামড়ার রমরমা ব্যবসা হলেও অনেক ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে ব্যবসা ধরে রাখতে পারেননি। আবার অনেকে চামড়া ব্যবসায় ঋণ না পেয়ে পুঁজির অভাবে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। তাই এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ীর দাবি, সরকারিভাবে চামড়া কেনাবেচায় নীতিমালা তৈরি, চামড়া শিল্পে ঋণের ব্যবস্থাসহ কাচা চামড়া সংরণের ব্যবস্থা করা হোক।
নগরীর শাপলা চত্বর সংলগ্ন টার্মিনাল রোডের দুই ধারে দেশ স্বাধীনের আগে গড়ে ওঠে চামড়াপট্টি। ব্যবসায়ীদের দাবি, তখন এখান থেকে চামড়া নিয়মিত কলকাতায় যেত। শুরুতে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী চামড়া কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই সময় চামড়ার ব্যবসা এতোই প্রসার ঘটে যে, সংরণ করে রাখা চামড়ার দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারতো না।
কিন্তু সময়মতো বকেয়া টাকা তুলতে ব্যর্থ হওয়া, চামড়ার ভালো বাজার না পাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা এখন নেমে এসেছে আনুমানিক ২০ এর কোঠায়।
ব্যবসায়ীরা জানায়, এ অঞ্চলে চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানার কালিবাড়ী হাট। সপ্তাহে দুইদিন অর্থাৎ শনিবার ও বুধবার এ হাট বসে। চামড়াপট্টি থেকে ব্যবসায়ীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ চামড়া ব্যাবাসয়ীরা চামড়া নিয়ে যায় সেখানে।
চামড়া ব্যবসায়ী মুজিবর রহমান (জাহেল মুজিবর) ব জানান, চামড়াপট্টি থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ হাজার পিস গরুর চামড়া কালিবাড়ী হাটে আসে। ষাঁড়ের চামড়া বিক্রি হয় ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া গাভী ও বলদের চামড়া বিক্রি হয় ৭শ থেকে ৮শ টাকা। হাটে রিলায়েন্স ও বিএলসি ট্যানারির প্রতিনিধিরা তাদের চামড়া কিনে থাকেন।
অন্যদিকে, মিজান, সোহাগ, রন্টু, মমিন, ইব্রাহিমসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এমনিতে মাত্র দুটি ট্যানারির প্রতিনিধি হাটে আসে। কিন্তু কোনো কারণে যদি একটি ট্যানারির প্রতিনিধি না আসে তাহলে চামড়ার দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ থাকে না। ট্যানারি মালিকদের নির্ধিারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়। তখন বেশি দামে চামড়া কেনা থাকলেও কোনো উপায় থাকে না।’
তাছাড়া চামড়া সংরণ করে রাখবেন সেই সুযোগও নেই। নগদ দামে চামড়া কিনে বেশ কিছু টাকা বাকি রেখে ট্যানারিগুলোতে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রাপ্য বকেয়া টাকার বিপরীতে কোনো প্রমাণাদি তাদের কখনও দেয়া হয় না। অতীতে প্রসিদ্ধ ট্যানারি মালিকের মৃত্যুর কারণে চামড়াপট্টির অনেক ব্যবসায়ী বকেয়া লাখ লাখ টাকা আজও তুলতে না পেরে মূলধনের অভাবে পথে বসে গেছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, ‘চামড়ার বাজারে ধস নামলেও ব্যবসায়ীরা চামড়া সংরণ করবেন এমন কোনো উপায় নেই। আবার চামড়ার দাম বৃদ্ধি না পেলেও চামড়া ভালো রাখার জন্য ব্যবহৃত অন্যতম উপকরণ লবণের দাম বেড়েই চলেছে। ৫শ ২০ টাকার ১ বস্তা লবণ (প্রায় ৭০ কেজি) বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকায়।’
আগে চামড়া ব্যবসায়ী হলেও বর্তমানে অটোরিকশা বিক্রেতা মুরাদ খান বলেন, ‘চামড়া বিক্রি করে বছরের পর বছর ধর্না দিয়েও বকেয়া টাকা তুলতে পারিনি। তাই পারিবারিক চামড়ার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু আমি নই, আমার মতো অনেকে পুঁজি হারিয়ে আজ পথে বসেছে অথবা ধার-দেনা করে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছে।’
চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ট্যানারি মালিক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে রংপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা গত মৌসুমের ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পাবেন। তবে এবার সে টাকা পরিশোধ করে নতুন করে চামড়া কেনা হবে।’
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘চামড়ার সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বর্তমানে চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়ার ভালো দাম পাচ্ছেন না। এমনিতে দীর্ঘদিন থেকে ট্যানারি মালিকদের কাছে এখানকার ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। ব্যবসায়ীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পেশা পরিবর্তন করেছে অথবা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে। তাই চামড়া শিল্পে ব্যাংক ঋণ চালু করাসহ সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 4438250874548107651

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item