জলঢাকায় নারী শিক্ষার প্রসারে উজ্জল নক্ষত্র চাঁদমামা হাজী পিজিরুল আলম দুলাল

মর্তুজা ইসলাম, জলঢাকা, (নীলফামারী) প্রতিনিধি ঃ
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় হতভাগ্য কন্যা শিশুদের শিক্ষার প্রসার, স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলাসহ সমাজ সচেতনতায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন আলহাজ্ব পিজিরুল আলম দুলাল।
উপজেলার চাওড়াডাঙ্গী গ্রামের রেলওয়ে কর্মকর্তা ও পরবর্তীতে স্কুল শিক মোসলেম উদ্দিন আহমেদ ও পিয়ারা আহমেদের ঘরে ১৩ অক্টোবরে ১৯৪৩ সালে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। তিনি অর্থনীতিতে অনার্স এবং এমএ পাশ করেন। কর্ম ময় জীবনে সফল ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। উত্তরা ব্যাংকের এজিএম পদ থেকে ১৯৯৬ সালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করেন। তারপর কিছু একটা করার জন্য বিবেক তাকে তাড়িত করে। আর শহরের কোলাহল মুখর পরিবেশ নয়। চলে আসেন পত্রিক ভিটায় ছায়া ঘেরা সবুজ পরিবেশ যেখানে তার নাড়ি পুঁতে রাখা সহ আছে শৈশবের অফুরন্ত স্মৃতি। স্ত্রী সৈয়দা মোতাহারা বানুসহ উপলব্ধি করতে থাকেন সমাজের কিছু অবহেলা,অনাদর, অসচেতনতা, ধর্মের লেবাসে প্রতারনার দৃশ্য। কর্মস্থলে থাকাকালে রংপুর-খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি সমাজ সেবামুলক অনেক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। ফলে অনেত ভাবনার পর এই নিঃসন্তান দম্পত্তি একদিন মন স্থির করে ফেলেন অবহেলিত পিতৃমাতৃহারা কন্যা শিশুদের নিয়ে কাজ করবেন। ১৯৯৭ সালে এক শুভনে এলাকার অবহেলিত হতদরিদ্র ৫জন কন্যা শিশু নিয়ে চাঁদমনি নামে একটি কন্যা শিশু আশ্রমের সুচনা করেন আলহাজ্ব পিজিরুল আলম দুলাল। প্রতিষ্ঠানটি তার নিজ বাড়িতে হলেও বর্তমানে চাঁদমনি আশ্রমের মেয়েরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অধ্যায়নরত। অথচ চাঁদমনি আশ্রমটি এখানে প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশের অনেক অবহেলিত এলাকার মতো কন্যা শিশুরা হয়তো কেউ পাতা কুড়ানি হত। নয়তো শিশু বিয়ের পিড়িতে বসতে লাগত। জীবনে শিার আলো থেকে বঞ্চিত হত। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সেলাই সহ বিভিন্ন হস্তশিল্প শেখা তাদের স্বপ্নই রয়ে যেত। বর্তমানে চাঁদমনির খরচে পড়া লেখা করা কন্যা শিশুদের সংখ্যা ৫৫ জন। এখানে পড়ালেখার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন শিার জন্য মক্তব, সেলাই প্রশিন কেন্দ্র, ভ্রাম্যমান পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আছে। আশ্রিত অনাথ বালিকাদের দ্বারা অবসর সময়ে তৈরি হস্ত শিল্প পন্য প্রদর্শনীর জন্য দ্বি-বার্ষিক চাঁদমনি গ্রামীন মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া উপজেলার কিছু হিন্দু পরিবার সহ হরিজন পলীর কন্যা শিশুরা চাঁদমনি থেকে নিয়মিত পড়ালেখার যাবতীয় ব্যয়ের সুবিধা পেয়ে থাকে চাঁদমনি থেকে। হরিজন পলী হতেও একজন এসএসসি পাশ করেছে। শুধু তাই নয় অনেক মুসলিম ও হিন্দু পরিবারের কন্যা শিশুরা চাঁদমনির অনাবাসিক হলেও তারা শিা, বস্ত্র ইত্যাদি সাহায্য সহযোগীতা পেয়ে থাকে। পিজিরুল আমল ১৯৯৫ সালে পবিত্র হজব্রত পালন করেন। তিনি নারী শিা অগ্রদূত মহিয়ষী রমনী বেগম রোকেয়া মাদার তেরেসার আদর্শে অনুপ্রানিত বলে জানান। এলাকায় তাকে চাঁদমামা বলে অনেক শিশুই ডাকে। ডাকটি মধুর হলেও ব্যক্তিগত জীবনে একেবারেই আশ্রয়হীন, দাম্পত্য জীবনে তারা চাঁদমনির চাঁদমাখা মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে সন্তানহীন অনুভুতি গুলো তাদের কখনও দাগ কাটে না। সরেজমিনে চাঁদমনির আশ্রমে প্রবেশ করলে দেখা যায় চিরায়ত বাংলার হারিয়ে যাওয়া কিছু উপকরনের নমুনা। গরুরগাড়ী, পালকি, ঢেকিসহ ১৯৭১ সালের গনহত্যার জলঢাকা কালীগঞ্জ বধ্যভুমির শহীদদের তালিকা ইত্যাদি। আবাসিক কন্যাদের জন্য পড়ার প। এখানে পিজিরুল আমল নিজেই শিশুদের প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়ালেখার তদারকি করে থাকেন। বিনোদনের জন্য আশ্রমটির ভিতরে খেলার ব্যবস্থা কবিতা আবৃতি ও সংগীতের জন্য রয়েছে বাদ্যযন্ত্র। এখানে একটি গোলঘর রয়েছে। এখানে উঠে এসব কন্যারা গান, কবিতা, নৃত্য পরিবেশন করে বলে তাদের জরতা কাটে সাহসী হয় ও সাবলীল বলতে পারে। এখানকার কন্যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেকে অধ্যায়ন করা সহ অনেকেই সংসার জীবনে চলে গেছেন। তবে বিয়ের সিংহভাগ খরচ চাঁদমনি বহন করে থাকে। এ সব বিয়ে যৌতুক বিহিন হয়ে থাকে। আলহাজ্ব পিজিরুল আলম দুলাল সমাজের রন্ধে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন কুসংস্কারে আশ্রমে থাকা অন্ধকারকে আলোকিত করার জন্য নিরলস তার ল্য অব্যহত রেখেছেন। এ সব করতে গিয়ে তার চাকুরী জীবনের অবসরকালীন টাকা, পৈত্রিক সম্পত্তিত সবই ফুরিয়েছেন। বর্তমানে তার কিছু আতœীয় স্বজন, চাকুরী জীবনের সহকর্মী ও কিছু দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় চাঁদমনি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে। এছাড়া নিয়মিত যারা সাহায্য করে থাকেন তাদের মধ্যে বোন মাসুদা বেগম ও ভগ্নিপতি আব্দুল কাদের অন্যতম। এখন তিনি বয়সের ভারে ন্যুজ হলেও তার কর্ম উদ্দীপনার অভাব নেই। হতভাগ্য কন্যা সন্তানের জন্য অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে নিরলস ভাবে কাজ করছেন, শিশু বিয়ের খবর পেলে পথ যতদুরে হোক, ভ্যান যোগে ছুটে যান সেখানে প্রতিরোধের জন্য। নারী নির্যাতন ও শিশু বিয়ে রোধে তার অবদান অপরীসীম এ নিয়ে আলহাজ্ব পিজিরুল আলম দুলাল, কথার ফুলঝুড়ি নয়, কাজ করতে হবে। উদারর ভাবে সমাজ সেবায় এগিয়ে আসলে অভাব, কষ্ট, অবশ্যই লাঘব হবে। আমাদের দিন একদিন বদল হবেই। এবারের এইচ এসসি পরীায় মারুফা আক্তার ও আফরোজা বেগম নামে তার আশ্রত দুইটি মেয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। বালাগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাই জানান, চাঁদমনি আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা পিজিরুল আলম বিভিন্ন কর্মকান্ডে ইউনিয়নটিকে আলোকিত করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রগতিশীল রাজনীতির বিশ্বাসী ও আধুনিক স্বপ্নের বাস্তাবায়নকারী আলহাজ্ব পিজিরুল আলম। তিনি এলাকার অনাথ কন্যা শিশু সহ সবার সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। তার মতো আর ১০জন এগিয়ে আসলে দেশের ভাবমুর্তি বিশ্ব দরবারে আরও ব্যাপকতা পাবে।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 4327166087327631893

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item