রংপুরে এমপি প্রতিনিধির নজিরবিহীন অনিয়ম অতিদরিদ্রদের বরাদ্দকৃত টিআর কাবিখা’র অর্থ আত্মসাত

হাজী মারুফ রংপুর বুরে‌্যা অফিস : 

রংপুরের দরিদ্র জনসাধারণের জীবিকার পথ প্রশস্ত করতে সরকার কর্তৃক দেয় এমপি’র বরাদ্দের কাবিখা-টিআর’র চাল নয়-ছয় এবং ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে নগদ টাকা আত্মসাত করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। আর এ কাজে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেছেন এমপি’র প্রতিনিধি জেলা জাপা’র সদস্য সচিবের পিএস কাম রাজনৈতিক উপদেষ্টা পরিচয়ধারী দু’জন সাবেক রিকশা শ্রমিক নেতা। এরা হলো সামসুল আলম ও আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ট্যারা রাজ্জাক।

জানা যায়, রংপুর-৩ সদর আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর ব্যস্ততার কারণে এমপি’র প্রতিনিধি হিসেবে জেলা জাপা’র পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেন তারই মনোনিত সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক। বর্তমান রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি অনুমোদন হওয়ার পর জেলা জাপা’র সদস্যসচিব হয়েছেন খোদ জাপা চেয়ারম্যানের ভ্রাতুষ্পুত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। যথারীতি শাপে বর বনে গিয়ে তিনি এমপি’র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্তও হন। 
জেলা রিলিফ অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে গত অর্থবছরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় সরকার অতিদরিদ্রদের জীবিকার সংস্থানে ১ম পর্যায়ে প্রত্যেক এমপিকে ২০০ টন কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য), ৩০০ টন টি.আর (টেস্ট রিলিফ) এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬০ লাখ টাকা ও ২০০ টন কাবিখা’র চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম পর্যায়ে টিআর প্রকল্পের ৩০০ টন চাল এমপি’র প্রতিনিধির অনুগত লোকজনকে নামমাত্র প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু বরাদ্দ দিয়ে অন্যসব ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বাকী সবগুলো বরাদ্দ আত্মসাত করা হয়। একইসাথে ১ম পর্যায়ের কাবিখা’র ২০০ টন চাল’র পুরো বরাদ্দটাই জাপা’র সদর উপজেলা আহবায়ক কমিটির সাথে যোগসাজস করে এমপি’র প্রতিনিধি কর্তৃক লোপাট করা হয়।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ বন্টনের প্রাক্কালে জেলা জাপা’র সদস্য সচিবের সাথে জাপা মহানগর কমিটির মনকষাকষি হলে বিষয়টি এমপি এরশাদ পর্যন্ত গড়ায়। পরে এমপি’র হস্তক্ষেপে টি.আর প্রকল্পের নগদ টাকা ৬০ লাখ ভাগাভাগি করে জেলা জাপাকে ৩০ লাখ এবং মহানগর জাপাকে ৩০ লাখ এভাবে দু’ভাগ করে দুই কমিটিকে দেয়া হয়। কিন্তু কাবিখা বরাদ্দের ২০০ টন চাল এমপি’র প্রতিনিধি ও জাপা চেয়ারম্যানের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ -এর নিজ হাতেই থেকে যায়। যা একই কায়দায় লোপাট করা হয়। পাশাপাশি ২য় পর্যায়ের নগদ টাকা বন্টনে একাধিক ভূয়া প্রকল্পের অস্তিত্ব থাকলেও টাকা বন্টনে নয়-ছয়ের কারনে ১ হতে ২৮ নম্বর প্রকল্প পর্যন্ত এই ২৮টি প্রকল্পের বিপরীতে  ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেরত চলে যায়। 
জেলা ও মহানগর কমিটির বর্তমান ও সাবেক একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম খবরকে বলেন, জেলা কমিটির সদস্য সচিব নিজে কর্মী ও জনগন থেকে দূরে থাকেন। তার সব কাজই করেন রিকশা চালক থেকে রিকশা শ্রমিকের সাবেক দুই নেতা। তারাই তার পিএস ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা। এমপি’র বরাদ্দ বন্টনের ক্ষেত্রে সদস্য সচিবের হয়ে এই দু’জন অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেন। কোথায় বরাদ্দ দিতে হবে, কাকে কত দিতে হবে প্রত্যক সঠিক বরাদ্দ হতে টন প্রতি ৩ হাজার, আর নগদ টাকার ক্ষেত্রে একইভাবে ২০ হাজারে তাদের একটা অংশ দিতে হবে। এভাবে ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে প্রকল্প কমিটির যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে অবশেষে হা-হুতাশ করেন। আর ভূয়া প্রকল্পের বিষয়টি তো বুঝতেই পারেন। এ প্রতিবেদকের নিজস্ব পর্যবেক্ষনেও জেলা জাপা সদস্য সচিবের পিএস ও উপদেষ্টা পরিচয়ধারী এই দুই সাবেক রিকশা শ্রমিক নেতার অভাবনীয় উত্থান ও জৌলুস চোখে পড়েছে। এদের বক্তব্য জানতে তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
১ম ও ২য় পর্যায়ের বরাদ্দ বন্টন নিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার -এর  সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়টি আমার নলেজের বাইরে। বরাদ্দটা যার তিনিই ভালো জানেন। এ ব্যাপারে আমি এর বেশি বলতে পারবো না।
১ম ও ২য় পর্যায়ের বরাদ্দ বন্টন, কাবিখা’র বরাদ্দ পুরোটাই আত্মসাত এবং ২য় পর্যায়ের ২৮টি প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়ে এমপি’র  প্রতিনিধি ও জেলা জাপা’র সদস্যসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এর সাথে কথা হলে তিনি কাবিখা-টিআর’র বরাদ্দ এবং প্রকল্প বিষয় এড়িয়ে গিয়ে শুধু ফেরত প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রথম খবরকে বলেন, ট্রেজারি শাখার ভুলের কারনে ওই প্রকল্পগুলো ফেরত গেছে।
জানতে চাইলে মহানগর জাপা’র আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বরাদ্দ যার সে বিষয়ে তিনিই বারো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার আর বলার কিছু নেই। তবে তিনি ২য় পর্যায়ের ২৮টি প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে  বলেন, সময়মত উপজেলা অফিস থেকে কাগজপত্র প্রস্তুত করে ট্রেজারিতে না যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর টাকা ফেরত যায়।
অধিকাংশ ভূয়া প্রকল্পে সহায়তা ও ১ম পর্যায় বরাদ্দকৃত কাবিখা’র ২০০ টন চাল লোপাট করার বিষয়ে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবেদ আলী (ক্যাশিয়ার) গতকাল শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের সময় বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমরা রংপুর সদর জাপা’র জন্য ৩ লাখ টাকা পেয়েছি। যথারীতি বন্টনও করেছি। বাকীসবের ব্যাপারে আমি বলতে পারবো না।
১ম ও ২য় পর্যায়ের বরাদ্দ বন্টন, কাবিখা’র বরাদ্দ পুরোটাই আত্মসাত এবং ২য় পর্যায়ের ২৮টি প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সামিয়েল মার্ডি বলেন, এমপি মহোদয়ের কাজ, তিনিই তার বরাদ্দ দেয়া প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ভালো জানেন। আর ২৮টি প্রকল্প ফেরত যাওয়ার বিষয়টি তিনি ট্রেজারির সমস্যা বলে জানান। 
রংপুর জাতীয় পার্টির দূর্গ বলে খ্যাত হলেও দলীয় কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ। নেতৃবৃন্দের কারো কারো আচরণে কর্মী ও সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। তৃণমূল পর্যায়ের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী আক্ষেপ করে বলেছেন, প্রায় ৮ মাস অতিক্রান্ত হলেও দু’ একটি অঙ্গ সংগঠনের পুর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন ও অধিকাংশ ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কমিটি নেই। অথচ, টি.আর এবং কাবিখা’র বরাদ্দ নিয়ে যা হয়েছে এতে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করাই দুরহ। তারা এ ব্যাপারে পার্টি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করাসহ প্রকল্প নিয়ে এমপি প্রতিনিধির নজিরবিহীন অনিয়ম ক্ষতিয়ে দেখারও দাবি করছেন।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 2715693637725400652

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item