উত্তরা আবাসনে নিপুণ হাতে সুঁই-সুতা দিয়ে চুমকি পুঁথি ও জরির কাজ করছে ওরা

মো. জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
স্কুল ছুটি বা বন্ধের ফাঁকে ফাঁকে সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নেহা বসে না থেকে জরির কাজ করছে। তাকে সহযোগিতা করছে তারই ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাসেল। বাবা জামাল মুরগির দোকানে কর্মচারি হিসাবে কাজ করেন। সংসার চলেনা। তাই তাদের মা সাবিহা বেগম (৫০) এ কাজে হাত লাগিয়ে থাকেন।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপীর উত্তরা আবাসন প্রকল্প। যেখানে নদী ভাঙ্গা, আশ্রয়হীন অভাবী আর হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। এই প্রকল্প এলাকায় একটু উঁকি দিলেই চোখে পড়ে গোল হয়ে বসে কাজ করছেন শিশু-কিশোর-কিশোরী ও নারীরা। প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনে বসানো কাঠের তৈরি ফ্রেম। মেয়েরা নিপুণ হাতে সুঁই- সুতা দিয়ে চুমকি, পুঁথি আর জরির কাজ করছে। তৈরি করছে নানা নকশার জরির শাড়ি, ওড়না, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, জিপসী ও ব্লাউজ। এখানকার বসবাসকারী ৫/৬শ’ পরিবার এ কাজ করে জীবনধারণ করছেন। অভাবকে জয় করেছেন তারা। শুধুমাত্র হাতের কাজ করেই স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন সংসারে।
শিাবঞ্চিত শিশুরা সুযোগ পেয়েছে লেখাপড়ারও। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। নীলফামারী জেলার ঘনবসতিপূর্ণ সৈয়দপুরের ভাসমান মানুষের চাপ, বানভাসী, ভিটেমাটিহারা মানুষকে আশ্রয় দিতে শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঢেলাপীর এলাকায় ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি স্থাপন করা হয় উত্তরা আবাসন প্রকল্প। সেখানে আশ্রয় পায় ১ হাজার হতদরিদ্র পরিবার। 
আবাসনের সায়রুননেছা (৩০), জাবেদ আলী (১৮), মায়া বেগম (৩৫), হাসান (২২), মুক্তা পারভীন (২২) জানান, তাদের শাড়িসহ চুমকি, পুঁথি ও জরি সরবরাহ করা হয়। কাজ শেষে মজুরী বাবদ তারা শাড়ি প্রতি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা করে পায়। একটি শাড়িতে হাতের কাজ শেষ করতে অন্তত ১৫ দিন সময় লেগে যায়। তারা কেউ এ ব্যাপারে কোথাও প্রশিণও গ্রহণ করেনি। অন্যের কাজ দেখে নিজেরাই দ হয়েছে। তাদের কাজ করা শাড়ির চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি দিন দিন বাড়ছে এ কর্মে নিয়োজিত নারীদেরও সংখ্যা। আর এ কাজ করে অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী। 
আবাসন সমবায় ও পুলিশিং কমিটির সভাপতি মতিন আলম জানান, যখন আবাসনে কাজ ছিল না, তখন আমাদের না খেয়ে দিন কাটাতে হতো। সংসারে অভাব- অনটন লেগেই থাকতো। নারী কর্মীরা জানায়, একটি শাড়ির কাজ ৭ দিনের মধ্যে শেষ করে আয় হয় ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। প্রতিমাসে আমাদের আয় হয় ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। শাড়ির কাজ করে আমাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখন আমরা দুবেলা খেতে পারি, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেও পারি। 
কাপড়ে জরির এসব কাজ কেউ এককভাবে কেউবা গ্র“প ভিত্তিক ৩০/৩৫ জন মিলে কাজ করে থাকেন। তারা সকলেই অভাব- অনটনে দিন কাটালেও বর্তমানে কারচুপির কাজ করে সপ্তাহে কেউবা দৈনিক কাজ করে ৪শ’ থেকে ৯শ’ টাকা আয় করে থাকেন। তাদের তৈরি জরির এসব কাপড় ঢাকার বড় প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সর্বত্র পাঠানো হচ্ছে। দিন দিন এসব কাপড়ের চাহিদাও বেড়েছে। ফলে তাদের কাজ করার পরিসরও বেড়েছে।
সৈয়দপুর কারুপণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার শহর ও গ্রাম মিলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক জরির কাজ করতেন। মজুরী কম মেলায় অনেকে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার শিশু- কিশোরী ও নারী এবং পুরুষ এসব কাজে জড়িত রয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকার মহাজনরা শুধু শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও ওড়নার কাপড় পাঠান। আমরা পুঁথি, পাথর ও শ্রমিকের মজুরী দিয়ে এসব বানিয়ে পাঠালে তবে মহাজনরা টাকা দেয়। 
তিনি আরও জানান, তৈরি এসব কাপড় পার্শ্বেল বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গন্তব্যে পাঠানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তের থানা পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি ও চাঁদা আদায় করে। তিনি এ থেকে পরিত্রাণ ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের দাবি জানান।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6784025562230072528

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item