তিন মন্ত্রী নিয়ে বিপাকে জাপা

হাজী মারুফঃবর্তমান সরকারের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবে- দল থেকে দুই দফা এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তে জাপা এখনো অনড় থাকলেও এতে গোঁ ধরেছেন দলের তিন মন্ত্রী। তারা কোনোভাবেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পক্ষে নন। ফলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে উল্টো বিপাকে পড়েছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জাপার বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ও নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা থেকে জাপা পদত্যাগ করবে অনেকবারই এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতা রওশনও একমত। দু’জনের মত এক হওয়ার পরই আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলনেরও। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রওশন এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির সদস্যদের ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে রওশনের সেই সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভা থেকে জাপা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণার পর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজুল ইসলাম বিষয়টি তৎক্ষণাত জানিয়েছিলেন পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। প্রতিত্তরে তাজুলকে তিনি বলেছেন, ‘ম্যাডাম বললেই আমরা পদত্যাগ করবো কেন? আমরা কি তার কথায় পদত্যাগ করবো?’
এরপর রওশন এরশাদকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের এ বক্তব্য জানানো হলে রওশন এরশাদ স্পষ্ট করে বলেন, ‘দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতেই হবে। প্রধানমন্ত্রীও চান জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা পদত্যাগ করে দলটি প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদে ভূমিকা পালন করুক।’ আবার পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ হবিগঞ্জের এক সভায় ঘোষণা দেন মন্ত্রিসভা থেকে জাপার সদস্যরা বের হয়ে আসবেন। এরপর রংপুরেও তিনি একই বক্তব্য দেন। এর কিছুদিন পর এরশাদ জানিয়েছিলেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসবে।
 এ ঘটনায় এরশাদের ওপর তখন বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। তারা পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং সবার আগে এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করার দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের বিষয়ে রওশন দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও করেছেন। দলের সব সাংসদও মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই মেনে নেননি তিন মন্ত্রী। তাদের সাফ কথা পদত্যাগ বাদে অন্যকোনো পথ থাকলে বাতলিয়ে দিন। পদত্যাগের কোনো সিদ্ধান্ত যাতে তাদের উপর চাপিয়ে দিতে না পারেন সে জন্য তারা ইদানিং গা বাঁচিয়ে চলার নীতি অনুসরণ করছেন। এমনকি তারা দলের সংসদীয় কোনো মিটিংয়েও থাকছেন না বলে জানা গেছে।
তিন মন্ত্রীর মধ্যে কর্মসংস্থান ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক পার্টির সিনিয়র নেতা রওশন এরশাদের। কিন্তু সেই চুন্নুও রওশনকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগে রাজি করানোর জন্য রওশন বিভিন্নভাবে চেষ্টা কররেও কয়েক দফা ব্যর্থ হয়েছেন। অপরদিকে সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে এরশাদের মামা-ভাগ্নের সম্পর্ক। কিন্তু সেই ভাগ্নেকেও মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের বিষয়ে রাজি করাতে পারছে না মামা এরশাদ। আর এই দুই প্রতিমন্ত্রীর বাইরে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এরশাদ ও রওশন দু’কূলই রক্ষা করে চলেছেন। তবে তিনিও পদত্যাগে কোনোভাবেই রাজি নন বলে জানা গেছে। জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন কেন? তারা তো রওশন কিংবা এরশাদের কথায় মন্ত্রী হননি। তারা মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তাই প্রধানমন্ত্রী না বললে তো তারা পদত্যাগ করবে না।’ পার্টির আরেক নেতা বলেন, ‘যারা আজকে মন্ত্রী হয়েছেন তাদের দুই জনের মধ্যে মশিউর রহমান রাঙ্গা ও মুজিবুল হক চুন্নুর কিছুই ছিল না। তাদেরকে কেউ চিনতোও না। জাপায় এসেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। অথচ তারা আজ স্যারের (এরশাদ) বিরুদ্ধে কথা বলেন। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হলেও তারা বিরোধিতা করেন।’
এ নেতা আরো জানান, জাপা মন্ত্রিসভা থেকে কবে পদত্যাগ করছে? রাঙ্গা ও চুন্নুকে এমন প্রশ্ন দলের অনেকেই করেছেন। তারা প্রতিত্তরে বলেছেন- আগে এরশাদ পদত্যাগ (প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত) করুক তারপর আমরা করবো। ইদানিং তিন মন্ত্রী তাদের ইচ্ছেমতোই চলছেন-ফিরছেন। দল থেকে কোনো মিটিংয়ে ডাকা হলেও তারা আসেন না। এমনকি দলীয় কোনো সভা ও সমাবেশেও তাদের দেখা মিলে না। অথচ এই তিন মন্ত্রীকে নির্বাচনের আগে এরশাদের আশপাশে সর্বদাই ঘুরতে ফিরতে দেখা গেছে। তবে এতকিছুর পরও তাদের বিরুদ্ধে এরশাদ কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির এক যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘স্যারতো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছেন না। উল্টো তারাই স্যারকে পদত্যাগ করতে বলছেন। ওই তিনজন তো মন্ত্রিত্ব পেয়ে ভুলেই গেছেন তারা এরশাদের ছায়ায় এতো বড় হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘তিন মন্ত্রী কোনোভাবেই পদত্যাগ করতে রাজি নন। ফলে তাদের পদত্যাগ নিয়ে জাপা বেশ বিপাকেই পড়েছে। অস্বস্তিতে আছেন চেয়ারম্যান স্যার ও ম্যাডাম রওশন এরশাদও। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘জাপা কেন পদত্যাগ করবে? এমন পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। সময় এলে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো পদত্যাগ করবো কি না। মন্ত্রিসভা থেকে জাপা কি পদত্যাগ করবে? এমন প্রশ্ন শুনে উল্টো বিষ্ময় প্রকাশ করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘আমরা তো এমনটা জানি না। এ বিষয়ে কোনো কিছুই দল থেকে আমাদের এখনো জানানো হয়নি।’
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা সরকারকে খুশি করতে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সরাসরি জয় বাংলা বলে তার বক্তব্য শেষ করেন। তবে যখন পার্টির সভায় বক্তব্য রাখেন তখন বিষয়টি একবারেই চেপে যান তিনি। আর এ বিষয়টি নিয়ে জাপা নেতারাও তার প্রতি বেশ ক্ষুব্ধ। দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘উনি (রাঙ্গা) তো আ’লীগের মন্ত্রী। আর সে কারণেই তিনি জয় বাংলাকেই বেশি পছন্দ করেন। তাই হাসিনাকে খুশি করতে তার বক্তব্যে বারবার জয় বাংলা বলেন। দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, পার্টির যারা নানা কারণে বঞ্চিত-অবহেলিত তারা চাচ্ছেন সরকার থেকে বের হয়েছে বিতর্কের অবসান ঘটাতে। তারা চান জাতীয় পার্টি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে দাঁড় করানো হোক। আবার গোলাম মসিহকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত করার পর কয়েককজন নেতা চাচ্ছেন তাদেরও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবিতে বসানো হোক।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item