ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যর্থতার অভিযোগ বৃহত্তর বাণিজ্য সংগঠন রংপুর চেম্বারের নির্বাচন ক্ষমতা নিজের আয়ত্বে রাখতে ইলেকশনের নামে সিলেকশন বৈতরণীর পায়তারা

হাজী মারুফ রংপুর ব্যুরো.
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ বানিজ্যিক সংগঠন হিসেবে ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)’ একটি সুপরিচিত ও ঐতিহ্যবাহী নাম। সেদিক থেকে রংপুরের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরণে ‘রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে প্রত্যাশার শেষ নেই। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি নির্বাচনে এমনিভাবে আশায় বুকবেঁধে ভাগ্য নির্ধারক মনোনয়নের মধ্য দিয়ে সফলতার যে স্বপ্ন বুনেন শেষমেশ তা ‘ইলেকশনের নামে সিলেকশন’ হওয়ায় দির্ঘশ্বাসে পরিনত হয়েছে।
তা হলোÑযুগযুগ ধরে চলে আসা হাতেগোনা নির্দিষ্ট ক’জন ব্যবসায়ী রংপুর চেম্বারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের আয়ত্বে রাখতে সকল আটঘাট বেধে রেখেছেন। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ের সফলতার ফসল তাদের ঘরেই তুলছেন। তবে এ অবস্থার জন্য সচেতন ব্যবসায়ীরা নেতৃত্বের জটিলতাকেই দায়ী করছেন। আর আশানুরূপ নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়ার কারনে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরণে অব্যাহত ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন সংশিষ্টরা।
রংপুর চেম্বারের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক ভূক্তভোগী সদস্যের অভিযোগ, রংপুর চেম্বারের একটি মহল দির্ঘদিন ধরে সংগঠনে বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতার নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনে আসছেন। তারা একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একই টিআইএন নম্বর ব্যবহার করে ব্যবস্থাপক-কর্মচারিদের ভোটার বানিয়ে অনায়াসে সিলেকশন বৈতরনী পার করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন ২০১৫-২০১৭ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক প্রস্তÍুতকৃত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় দেখা যায়Ñমোতাহার গ্রুপের বেশ ক’টি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একই ধরনের টিআইএন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। ওই ভোটার তালিকায় ক্রমিক নম্বর ১০, সদস্য নম্বর জি-১১, টিআইএন নম্বর-৩৩৬৬৪২৫০১৮৩৪ এর অনুকূলে মেসার্স চৌধুরী আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজ লিঃ, ভোটার নম্বর ১০ ও ভোটারের নাম আলহাজ্ব মোতাহার হোসেন চৌধুরী, একই টিআইএন নম্বরে (৩৩৬৬৪২৫০১৮৩৪) ক্রমিক নং ১৫, সদস্য নং জি-১৬, মেসার্স ফয়জুন নাহার হিমাগার লিঃ, ভোটার নং ১৫, ভোটারের নাম বাহার উলা হেলালী। একইভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪জনকে ওই টিআইএন নম্বর দিয়ে ভোটার বানানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রভাবশালী মহলটি দির্ঘকাল যাবত রংপুর চেম্বারের শীর্ষ পদ সমূহে থাকার সুবাদে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক ভোটার তাদের নিজস্ব বলয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। আবার তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যে এলাকায় রয়েছে সেখানের ছোট খাটো ব্যবসায়ীদেরও নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ভোটার বানানো হয়েছে। 
সংগঠনটির অনেক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, যখনই চেম্বারের নির্বাচন ঘনিয়ে আসে,আর সাধারণ ব্যবসায়ীরা নেতৃত্বে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের চিন্তা ভাবনা করেন তখন শুরু হয় ওই প্রভাবশালী মহলটির নানান অপতৎপরতা। তারা এসময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে ‘জয়ি হতে পারবেন না’ টাকা নষ্ট করে লাভ কি এ শোগান তুলে প্রচার প্রচারনা চালান।
এদিকে, একই টিআইএন নম্বর দিয়ে সংশিষ্ট প্রভাবশালী মহলটির একাধিক ভোটার বানানোর প্রক্রিয়াকে বিধি পরিপন্থী বলে মত প্রকাশ করেছেন চেম্বারের এ্যাসোসিয়েট সদস্য ও পরিচালক প্রার্থী সাব্বির আহম্মেদ, সদস্য জাভেদ আহম্মেদ, রংপুর মহানগর দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল ইসলাম মিলন ও  রাসু। তারা সিলেকশন নয়, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে রংপুর চেম্বারের প্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি জানান।
রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী হারুর-অর রশিদ জানান, একই টিআইএন নম্বরে একাধিক ভোটার বানানোর বিষয়টি নজিরবীহিন। এতে মতার অপব্যবহার করা হয়েছে।
এব্যাপারে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান সরকার অসুস্থতার অজুুহাত দেখিয়ে বলেন, কোন অভিযোগ থাকলে আপিল বোর্ডে আবেদন করলে বিষয়টি দেখা যাবে।
একই টিআইএন নম্বরের একাধিক ভোটারের বিষয়ে এফবিসিসিআই এর লিগ্যাল এ্যাডভাইজার বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এক টিআইএন নম্বরের বিপরীতে ১জন ভোটার হতে পারবেন। তারপর বিষয়টি নিয়ে এনবিআরএর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। একই সাথে তিনি এমন েেত্র কর ফাঁকি দেয়ার সম্ভাবনার কথাও উলেখ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর চেম্বারের এক পরিচালক বলেন, রংপুর বিভাগীয় হেড কোয়ার্ডারে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র অবস্থান। সেেেত্র বৃহত্তর বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে চেম্বারের প্রতি ব্যবসায়ীদের যে প্রত্যাশা তা পুরণ হয়নি। কেননা দীর্ঘ সময়েও ব্যবসায়ীদের ন্যুনতম স্বার্থ সংরণ না হওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। আর এজন্য চাই ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন।
এব্যাপারে খোদ মোতাহার গ্র“প অব ইন্ডাষ্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানগুলোর আলাদা আলাদা টিআইএন নম্বর রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের নামে একই টিআইএন নম্বরের একাধিক ভোটার হওয়ার বিষয়টিকে তিনি প্রিন্টিং মিস্টেক বলে দাবি করেন।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item