পঞ্চগড় চিনিকলে সাড়ে ৩২ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত : বেতন নেই তিন মাস

হাজী মারুফ রংপুর আফিস বুরে‌্যা অফিস 

পঞ্চগড়ে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় চিনিকলের অবস্থা খুবই নাজুক। এখানকার উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না চিনিকল কর্তৃপক্ষ। গত এপ্রিল মাস থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তারা। অথচ এই চিনিকলের উৎপাদিত ৩২ কোটি ৪৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা মূল্যের ৮ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন চিনি এখনো অবিক্রিত রয়েছে। চিনি বিক্রি না হলে আগামী ঈদের আগে শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন পাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। 

চিনিকল সূত্র জানায়, গত মৌসুমে পঞ্চগড় চিনিকলে ৩ হাজার ৫১৮ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। সেই সাথে দুই মৌসূমের ৬ হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত ছিল। গত ছয় মাস বিক্রির পর এখনো এই চিনিকলে ৮ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত রয়েছে। ৪০ টাকার থেকে দাম কমিয়ে ৩৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও চিনি বিক্রি না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সময়মত কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না। অর্থাভাবে পাওনা পরিশোধ করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সকাল হতেই শ্রমিক-কর্মচারীরা ভিড় করছে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষের সামনে। কিন্তু তিনিও কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না। চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিনি বিক্রয় না হওয়ায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের নির্ধারিত প্যাকেটে এখানকার উৎপাদিত চিনি প্যাকেট করে বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছিল। বাজারে এই চিনির চাহিদা থাকলেও সঠিক বাজারজাতকরণের অভাবে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হতে বসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিনিকলের চিনির দাম কমিয়ে দেয়ার পর ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিদেশ থেকে আমদানিকৃত চিনির দামও কমিয়ে দেয়া হয়। চিনিকলের চিনি মিষ্টি বেশি ও স্বাস্থ্যসম্মত হলেও বেশি সুযোগ সুবিধা দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিদেশ থেকে আনা ক্রুড থেকে উৎপাদিত পরিশোধিত সাদা চিনি বিক্রি করছে। বাংলাদেশে চিনির মূল ক্রেতা মিষ্টি তৈরীর কারখানাগুলো। বাংলাদেশে উৎপাদিত চিনির রং কিছুটা লালচে হওয়ায় তারা বিদেশ থেকে আনা পরিশোধিত সাদা চিনিই ক্রয় করছে। এ কারণে দেশে উৎপাদিত চিনির চাহিদা অনেক কমে গেছে। অনেকের মতে, সরকার ৩ মাসের জন্য বিদেশ থেকে চিনি আমদানি বন্ধ করে দিলেই দেশে উৎপাদিত সকল চিনি বিক্রি হয়ে যাবে। এতে করে চিনিকলগুলো লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, সরকারের অদূরদর্শিতার জন্য দেশের চিনিকলগুলো বন্ধ হতে বসেছে। দেশের চাহিদার খুব সামান্য অংশ চিনি উৎপাদন করে চিনিকলগুলো। তারপরও দেশে উৎপাদিত চিনি বিক্রয় হচ্ছে না। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে বিদেশ থেকে চিনি আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হলেও পরে তা অজ্ঞাত কারণে প্রত্যাহার করা হয়। বিদেশ থেকে চিনি আমাদানীতে বড় অংকের শুল্প আরোপ করা না হলে দেশের চিনি শিল্প ধংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পঞ্চগড় চিনিকলে উৎপাদিত চিনি বিক্রয় না হওয়ায় আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীরা তিন মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। ঈদের আগে তারা বেতন না পেলে তাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আব্দুর রশীদ প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, চিনি বিক্রয় না করতে পারলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেয়া কঠিন হবে। ঈদের আগে চিনি বিক্রয় করতে না পারলে অন্য কোন উৎস হতে কিছু টাকা এনে এক মাসের জন্য হলেও তাদের বেতন পরিশোধ করার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 2055494840903884757

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item