সদস্য মহলে গোপন ব্যালটে নির্বাচন দাবি রংপুর চেম্বারকে রাহুগ্রাসমূক্ত করতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিকল্প নেই

হাজী মারুফ রংপুর আফিস বুরে‌্যা অফিস 

ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার বৃহত্তর বানিজ্যিক সংগঠন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে রংপুর চেম্বার গড়ে উঠলেও এর বাস্তব উন্নয়ন দৃশ্যত: আরসিসিআই স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ অঞ্চলের আপামর ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। রংপুর চেম্বার প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে সংগঠনের বর্তমান যে চালচিত্র তা কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির সিলেকশন সিন্ডিকেটের ফসল। এ অবস্থা থেকে সংগঠনের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চেম্বারের অবহেলিত সাধারণ সদস্যদের মুখে মুখে এখন একটাই দাবিÑ গোপন ব্যালটে নির্বাচন’।
এছাড়া সদস্যরা মনে করছেনÑরংপুর চেম্বারকে রাহুগ্রাসমূক্ত করতে সংগঠনের অভ্যন্তরে সৃষ্টি করা দ্বিধাবিভক্তির অবসান ঘটাতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিকল্প নেই।রংপুর অঞ্চলের ব্যবসার প্রসার, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তা ও শিল্পপতিদের স্বার্থ রক্ষা এবং সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি। এই দির্ঘ সময়ে সংগঠনটির পরিচালকরা সে লক্ষ্যকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থেকেছেন। ফলে বিভাগীয় হেড কোয়ার্টারের আশপাশের জেলার চেম্বারগুলো দিন দিন ব্যবসা-বানিজ্যে প্রসারের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে। পক্ষান্তরে মহানগরীতে অবস্থিত রংপুর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রি অপার সম্ভাবনা থাকা সত্বেও ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। ব্যবসায়িদের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে চেম্বার পরিচালনা পর্ষদ নিজেদের আখের গোছাতে মরিয়া। রংপুর চেম্বারের অভ্যন্তরে অব্যাহত এ ধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সদস্য ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে রংপুরের সচেতন ৩৩ জন ব্যবসায়ীকে নিয়ে গড়ে ওঠে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংস্থা অধ্যাদেশ এর ৩ ধারা অনুযায়ী রংপুর চেম্বার অনুমোদন লাভ করে। অনুমোদনের পর থেকে রংপুর জেলাজুড়ে ব্যবসায়িদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এটি কাজ করলেও সময়ের ব্যবধানে এর ব্যাপ্তি কমতে থাকে। ১৯৭২ সালের পর থেকে রংপুরে ব্যবসা-বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ২০১৫ সালে রংপুর জেলার ৮ উপজেলা মিলে বর্তমানে ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখেরও বেশি। মাত্র ৩৩ জন সদস্য নিয়ে গড়ে ওঠা এক সময়ের এই রংপুর চেম্বার ৪২ বছরে পর্যায়ক্রমে এ্যাসোসিয়েট ও জেনারেল মিলে সদস্য সংখ্যা ৪ হাজার হলেও বর্তমানে তা ৭৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে এসোসিয়েট সদস্য ২০৮ ও সাধারণ সদস্য ৫শ’ ৪৪জন।চেম্বার সংগঠন প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য, জেলায় নতুন শিল্প স্থাপনের ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া, রুগ্নশিল্প পুনরুজ্জীবিত করার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা, ব্যবসা চলাকালীন ব্যবসায়ীদের আর্থিক সমস্যার কারণে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে এ ব্যাপারে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করাসহ তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট সবকিছুর দেখভাল করার দায়িত্ব চেম্বার অব কমার্সের। কিন্তু এধরনের কোন পদক্ষেপে রংপুর চেম্বারের কোন অংশগ্রহন না থাকায় প্রতি পদে পদে নানান ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে রংপুরের ব্যবসায়ীদের। শিল্প-বানিজ্য ক্ষেত্রে নীলফামারী, দিনাজুপুরসহ রংপুরের আশ-পাশের জেলাগুলোয় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও এ ক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে আছে রংপুর জেলা। এ অঞ্চলের ব্যবসা-শিল্প প্রসার ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে জেলা চেম্বারের পরামর্শ এবং মনিটরিং ব্যবস্থারর সার্বক্ষণিক অংশগ্রহন নিশ্চিত থাকার কথা থাকলেও রংপুর চেম্বার এ ব্যাপারে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। যোগাযোগ ও বিদ্যুত ক্ষেত্রে রংপুর জেলা অগ্রসরমান হলেও আজ পর্যন্ত রংপুরে কোন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। রংপুর বিসিক শিল্প নগরীতে গেলে দেখা যায়, প্লটের পর প্লট খালিই পড়ে আছে, কিন্তু দিকনির্দেশনা কিংবা মনিটরিং এর অভাবে এগুলোতে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারছে না। পোলট্রিশিল্পে একসময় রংপুর বেশ সম্ভাবনা জাগালেও এখন এ শিল্পও রুগ্নপ্রায়। গত কয়েক বছরে রংপুরের বেশ কয়েকটি পোলট্রি শিল্প মালিককে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিতে হয়েছে। অথচ রংপুর চেম্বার অব কমার্স যদি এ ব্যাপারে সামান্য এগিয়ে  আসতো তাহলে হয়তো এ শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যেত। 
এ বিষয়ে চেম্বারের অসংখ্য সদস্য প্রথম খবরকে জানিয়েছেন যে, রংপুর জেলার ব্যবসায়ীদের বৃহত্তর বানিজ্যিক সংগঠন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষনে মূখ্য ভূমিকা না রেখে গৌণ দায়িত্ব পালনে বেশী আগ্রহী। কেননা, এতে বান বার ক্ষমতায় আসীন হওয়া সিন্ডিকেটটির তেমন যায় আসে না।এক অভিযোগে জানা যায়, রংপুর চেম্বার অব কমার্সের উন্নয়ন ও কার্যক্রম বলতে বিদেশ ভ্রমন, শীতকালে কম্বল বিতরন আর চেম্বারের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরসিসিআই পাবলিক স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।  রংপুরের শিল্প ও ব্যবসার প্রসারের জন্য জেলা চেম্বার প্রতিবছর বানিজ্য মেলার আয়োজন করে থাকে,  অথচ; সেখানে রংপুরের ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহন ও উপস্থিতি খুবই নগন্য। কেননা চেম্বার সেটি শুরুতেই বিক্রি করে দেন। ফলে প্রতিবার বঞ্ছিতই থেকে গেছেন রংপুরের ব্যবসায়িরা। আর এ কারনেই রংপুরে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প কলকারখানার বিকাশ ঘটছে না। বাড়ছে না শিল্প উদ্যোক্তাও। যার পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর চেম্বারের সদস্য অন্তর্ভূক্তি কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে। এছাড়া রংপুর চেম্বারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ না হওয়ায় এখন আর সদস্যলাভের প্রত্যাশায় উদগ্রিব হন না ব্যবসায়ীরা। 
রংপুর চেম্বার প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পরেও বর্তমানে সদস্যসংখ্যা মাত্র ৭৫২ জন। এ প্রসঙ্গে সদস্য সাব্বির আহম্মেদ প্রথম খবরকে বলেন, ৫ থেকে ৭ বছর আগে এই রংপুর চেম্বারেই এ্যাসোসিয়েট সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় হাজার ও জেনারেল সদস্য আড়াই হাজারের মত। চেম্বারে সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে  উন্নয়নমূলক কর্মসূচি না থাকায় দিনের পর দিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। যে কারণে রংপুর চেম্বারে সদস্যসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ ব্যাপারে অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, চেম্বারের  প্রতিনিয়ত সদস্য অন্তর্ভুক্তির নিয়ম থাকলেও তা পরিচালকদের নিজেদের খেয়াল খুশির ওপর নির্ভর করে। এখানে এমনও দেখা গেছে, একটি প্রভাবশালী মহল নিজের ব্যক্তি স্বার্থে পরিচালিত করে আসছে সংগঠনটি। এই প্রভাবশালী ব্যক্তি বরাবরই পকেট ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে নিজের ও পছন্দের লোকদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাতেগোনা ৪/৫ জন নিজেদের শিল্পপতি ভেবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার মাধ্যমে বাকি সদস্যদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনে করে অবহেলার চোখে দেখছেন। এদিকে রংপুর বিভাগীয় হেড কোয়ার্টারে অবস্থিত রংপুর চেম্বারের বিপরীতে পার্শ্ববর্তী ছোট জেলাগুলোর চিত্র ভিন্ন। তারা নতুন হলেও রংপুরের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। নীলফামারি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির প্রেসিডেন্ট এস এম শফিকুল আলম ডাবলু মুঠোফোনে প্রথম খবরকে জানান, হাটি হাটি পা পা করে ২০০১ সালে ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে নীলফামারী চেম্বারের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে একজন প্রশাসকসহ মোট ৪ জন প্রেসিডেন্ট এলাকার ব্যবসার প্রসারের ব্যাপক অবদান রেখেছেন। বতর্মানে আমাদের চেম্বারের সদস্য ৯২৫ জন। আমি নিজেও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমরা অর্থনৈতিক বিষয়ে একটা রাইজিং পর্যায়ে আছি। তিনি বাণিজ্য মেলা প্রসঙ্গে বলেন, আমি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থের বিষয়ে চিন্তা করে মেলার আয়োজন করি।রংপুর চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু প্রথম খবরকে বলেন, আমি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে শুল্ক কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্ণর, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। সেই মোতাবেক সরকার ১০ ভাগ শুল্ক কমিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 3001224531655864300

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item