জামায়াত নেতা রাজু মন্ডলের প্রেসক্রিপসনে রংপুর মডেল কলেজ ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে

জঙ্গি তৎপরতা ও নাশকতার অর্থ যোগানে
কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ


হাজী মারুফ রংপুর 
রংপুর মডেল কলেজকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কলেজের সাময়িক বরখাস্ত উপাধ্যক্ষ ও জামায়াত নেতা তৌহিদুর রহমান মন্ডল। তিনি তার ষড়যন্ত্রমূলক ধ্বংসের প্রেসক্রিপসন বাস্তবায়নে কলেজের ফরম পুরনের টাকা, সরকার প্রদত্ত ল্যাপটপসহ লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে কলেজে গ্রুপিং তৈরি করে অবৈধভাবে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। অপরদিকে, এই জামায়াত নেতা
তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজুর বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক হত্যার চেষ্টা মামলার আসামী, জঙ্গি তৎপরতা ও নাশকতার অর্থ যোগানে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের বিষয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় কলেজের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, তৌহিদুর রহমান মন্ডল ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ খ্রীস্টাব্দে রংপুর মডেল কলেজে প্রভাষক পদার্থবিদ্যা হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ডিজির প্রতিনিধি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই ২৯ ডিসেম্বর ২০০১ তারিখে উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিদর্শন ও নিরিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক তদন্ত ও পরিদর্শন প্রতিবেদন স্মারক ডিআইএ/রংপুর/৮ সি/রাজ:৭৬১৭/৭, ৯ মার্চ ২০০৪ ইং তার প্রভাষক পদার্থবিদ্যা নিয়োগ বিধি সম্মত না হওয়ায় গৃহিত সকল টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ প্রদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ পর্যন্ত তিনি গৃহীত টাকা ফেরত দেন নাই।
পরবর্তীতে ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৪ইং তারিখের গভর্ণিং বডির সভায় তৌহিদুর রহমান মন্ডলের উপাধ্যক্ষ নিয়োগ বিধি সম্মত না হওয়ায় তা বাতিল করেন। ইতিপূর্বে তিনি পেশাগত অসাদাচারণের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ০২-০৪-২০১৩ ইং তারিখে অনুমোদিত হয়ে চুড়ান্ত বরখাস্ত হন। পরবর্তীতে ২০০৬ইং সালে উপাধ্যক্ষ পদ দাবী করে মামলা দায়ের করলে তা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। এতে কলেজের অপুরনীয় আর্থিক ও সুনাম ক্ষুন্ন হয়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট অঙ্গিকার নামা দিয়ে ১৩-১১-২০১৩ইং তারিখে পুনরায় উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করলেও তিনি সহকারী অধ্যাপকের বেতন ভাতা গ্রহন করতে থাকেন। তিনি উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করার পর সেপ্টেম্বর ২০১৩ই হতে নভেম্বর ২০১৩ইং পর্যন্ত পদার্থ বিদ্যার কাস গ্রহণ করেন। ডিসেম্বর ২০১৩ থেকে জুন ২০১৪ইং পর্যন্ত কাস গ্রহণ থেকে বিরত থাকায় গর্ভণিং বডির সিদ্ধান্তক্রমে স্মারক নং-র.ম.ক ৬৪/১৪ তাং-০৭-০৯-২০১৪ইং তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় পুণরায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশের বিষয়বস্তু ছিল কলেজের ¯œাতক পাশ কোর্সের ফরম পূরণে এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে বকেয়া রাখা, কাস গ্রহণ না করা, মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্যদিয়ে সংবাদ প্রচার করা, বিনা অনুমতিতে অনুপুস্থিত, বিভিন্ন অফিসে মিথ্যা তথ্যদিয়ে অভিযোগ দায়ের, কলেজ গভর্ণিং বডি বিরুদ্ধে ও শিক্ষক মন্ডলীর মাঝে গ্রুপিং এ লিপ্ত থাকা এবং সরকার প্রদত্ত ল্যাপটপ আত্মসাত করা। এসব অভিযোগের সঠিক জবাব না দেয়ায় পরবর্তীতে ২ জানুয়ারি ২০১৫ইং তারিখে  কলেজ গভর্ণিং বডির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি অদ্যবধি কলেজে অনুপুস্থিত রয়েছে।
আরও জানা যায়, কলেজের সাময়িক বরখাস্তকৃত উপাধ্যক্ষ তৌহিদুর রহমান মন্ডল এর মদদ ও সহযোগিতায় অনার্স ২০১৪-১৫ সেশনে ভর্তির টাকা রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আনসার আলী, বাংলা বিভাগের আবু সায়েম রিশালদারের মাধ্যমে প্রায় ৫লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে পলাতক রয়েছেন।
অনুসন্ধান ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্য জানান, তৌহিদুর রমহান মন্ডল রাজু ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বোচ্চ কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯০-৯১ সালে কারমাইকেল কলেজ রংপুর শাখার শিবির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে কারমাইকেল কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সবুরের ডান হাত কর্তনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ১৯৯২ সালে রংপুর শহর শাখা ছাত্রশিবিরের প্রশিক্ষণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের ছাত্র মৈত্রী নেতা জুবায়ের চৌধুরী রিমুর চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত আসামি ছিলেন, যার মামলা নং মতিহার থানা ০৬/৯৩।
উল্লেখ্য, ওই মামলায় তিনি ৬ মাস জেলে ছিলেন। ১৯৯৭ সালে মিঠাপুকুরে আওয়ামীলীগ কর্মী মহির হত্যা মামলার আসামী ছিলেন তিনি। এছাড়া ১৯৮৭ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কারমাইকেল কলেজ সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার রায়, আওয়ামী ছাত্রলীগের রফিক সরকার, ১৯৯২ সালের ২৯ মার্চ ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য প্রজন্ম নির্মাণের উদ্যোক্তা সংগঠন “শব্দকন্ঠ’’ এর কর্মী অবিনাশ রেজা, সুষম ও জুয়েল মমতাজকে হত্যা প্রচেষ্টা মামলার আসামী ছিলেন শিবির ক্যাডার রাজু। ভাস্কর্যের বেদী গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনায়ও নেতৃত্ব দেয় এই শিবির ক্যাডার। ১৯৯২ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া সর্বশেষ কাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেল থেকে জিএস প্রার্থী ছিলেন রাজু। পরবর্তেিত তিনি ২০০৩-০৪ পর্যন্ত দর্শনা ইউনিয়নের জামায়াতের সভাপতি ছিলেন। ২০০৫-০৬ সালে তামপাট ইউনিয়নের জামায়াত সভাপতি ছিলেন। ২০০৭-০৮ সালে জামায়াতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাখার সভাপতি ছিলেন। ২০০৯-১১ সালে শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশন, রংপুর শহর শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। বর্তমান তিনি জামায়াতের অঙ্গ-সংগঠন শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের রংপুর মহানগর কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য।
জানা গেছে, তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আটপুটিনিয়া ছড়ান বালুয়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত আজিজার রহমান মন্ডল, বর্তমানে তিনি রংপুর নগরীর ক্যাডেট কলেজ এলাকার ধর্মদাস মিলনপাড়ায় বসবাস করছেন।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোকলেছুর রহমান জানান, কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিল। বিগত জোট সরকারের আমলে জামায়াতের প্রভাবে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করলেও মামলা হওয়ায় তিনি থাকতে পারেননি। পরবর্তীতে কলেজের ফরম পূরণের ১৫-২০ লাখ টাকা আত্মসাতসহ নানান অভিযোগের কারণে গভর্ণিং বডি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান কলেজটিতে লেখাপড়াসহ সার্বিক বিষয়ে ভালোভাবে পরিচালিত হয়ে আসলেও কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তৌহিদুর রহমান মন্ডল বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি কলেজটিকে ধ্বংস করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তার অংশ হিসাবে ৬মাস থেকে কলেজে অনুপস্থিত থেকেও নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, জেলা প্রসাশকের কার্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে কলেজ গর্ভণিং বডি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সকলকে তার পত্রসমূহ আমলে না নেয়ার জন্য গর্ভণিং বডির সভাপতি, সদস্যবৃন্দ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড রংপুর শাখায় তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাব এমএসএ নং-২০৫০১১৭০২০০৫০৪১০৭-এ বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। তার কোন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা বড় ধরনের আয়ের উৎস নেই। তার এ্যাকাউন্টে এই অস্বাভাবিক লেনদেনে জনমনে গভীর সন্দেহ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তার এ্যাকাউন্টে অধিকাংশ টাকা এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বগুড়াসহ বিভিন্ন শাখা থেকে। এসব অর্থ জঙ্গী তৎপরতায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
দৈনিক আজকালের খবর, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক বায়ান্নর আলো, সাপ্তাহিক আইন সমাজ, অনলাইন পত্রিকা গার্ডিয়ান, বিডি নিউজে তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজুর বিরুদ্ধে তার এ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন ও জঙ্গী তৎপরতায় অভিযোগ উঠায় বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানা যায়।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 3913686171222023591

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item