ডোমার উপজেলার বনভূমি ও দরিদ্র মানুষের দীর্ঘশ্বাস

মোঃ আব্দুর রউফ, উন্নয়ন কর্মী, নীলফামারীঃনীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় সরকারী হিসেব মতে বনভূমি রয়েছে ৪৯২.৭৬ একর এর মধ্যে রক্ষিত বন ১২৭.৪০ একর এবং অর্পিত বন ৩৬৫.৩৬ একর। এই অর্পিত বনের বেশিভাগ জমিই হলো উপজেলার গোমনাতী ও ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নে।
অর্পিত বন সৃষ্টির ইতিহাসঃ এলাকাবাসী ও বন বিভাগের বিভিন্ন গেজেট নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে জানা যায় ১৯৫৯ সালে প্রাইভেট ফরেষ্ট অর্ডিন্যান্স জারী হয় ও অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিভিন্ন নোটিফিকেশনের মাধ্যমে গঠিত এ্যাপিলিয়েট কমিটির সুপারিশ অনুয়ায়ী জেলায় ব্যাক্তি মালিকানাধীন বনভূমি ও পতিত জমি রেজিওন্যাল ফরেষ্ট অফিসার বন বিভাগের উপর ১০০ বছরের জন্য অর্পিত হয়। ১৯২৭ সালের বন আইনের ২য় চ্যাপ্টারের ৩নং ধারায় সংরক্ষিত বন ঘোষণা সম্পর্কে বলা আছে যে, কোন বনভূমি অথবা পতিত জমি যাহা সরকারী মালিকানাধীন অথবা উহার উপর সরকারের মালিকানা স্বত্ব আছে অথবা সম্পুর্ণ বা আংশিক বনসম্পদ আছে এমন বনাঞ্চলকে সরকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করিতে পারিবেন। একজন কর্মকর্তাকে ফরেষ্ট সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ করিতে হইবে তিনি বিজ্ঞিপ্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানের উপর আপত্তি শুনিবেন।সরেজমিন পরিদর্শন করিবেন এবং ৮ (বি) ধারা মোতাবেক তিনি তাহার সিদ্ধান্ত ব্যাক্ত করিবেন।

জমির মালিকানাঃ গোমনাতী ও ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের অর্পিত বনভূমির ১০০% জমিই ব্যাক্তিমালিকানাধীন জমি। খাস বা বন বিভাগের মালিকানাধীন অর্পিত কোন বনায়ন নাই। প্রাকৃতিক কোন বনভূমিও অর্পিত জমির মধ্যে নাই। বন বিভাগ কতৃপক্ষ সরে জমিন তদন্ত ছাড়াই জমির মালিকদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করিয়া বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ আবাদী কৃষি জমি, বসত বাড়ী, পুকুর ব্যাক্তি মালীকানাধীন সিএস, আরএস খতিয়ান ভুক্ত কৃষি জমি পতিত দেখিয়ে গেজেট ভুক্ত করেন। ২১ জানুয়ারী ১৯৬৫ সালে ১০০(একশত) বছরের জন্য এক তরফা একটি গেজেট প্রকাশ করেন।
বন সৃজনঃ ১৯৬৯ সালে বন বিভাগের লোকজন জমি চিহ্নিত করতে আসলে বিষয়টি জানা জানি হয়, সেই সময় জমির মালিকগণ প্রতিবাদ করলে বনায়ন কার্যক্রম সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সাধীনতা পরবর্তি সময়ে ১৯৭৭-৭৮ সালে বন বিভাগ সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু করেন। বন বিভাগের কতৃপক্ষ সামাজিক বনায়ন নীতিমালা ভঙ্গ করে কৌশলগত কারণে এলাকার কিছু উৎশৃঙ্খল যুবক ও প্রভাবশালী লোকদের নিয়ে উপকারভোগী দল তৈরী করেন এবং জমির মালিক পক্ষকে বনায়নের ৪০% শেযার দেয়ার মৌখিক আশ্বাস দিয়ে পুলিশি প্রহরায় ১৯৭৮-৮৬ সময় কালে জমিতে বনায়নের চারা রোপনকরেন।
প্রতিকার চেয়ে জমির মালিকদের আবেদনঃ জমির মালিকগণ জেলা প্রশাসক, নীলফামারী বরাবরে ৮ ফেব্রুয়ারী’ ১৯৮৬ জমি ফেরত চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের পেক্ষীতে জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার নীলফামারীকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির পক্ষ থেকে জমির মালিকদের ২৫/৮/৮৮ তারিখে সহকারী কমিশনার ও তদন্ত কর্মকর্তা নীলফামারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত সা¦ারক নং বন ৪/৮৮ একটি নোটিশ করেন। নোটিশে জমির মালিক পক্ষ ও রেঞ্জ বন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ গোমনাতী ইউনিয়ন পরিষদে ২/৯/৮৮ তারিখ বেলা ৩:০০ টায়  উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। মালিকগণ যথা সময়ে উপস্থিত হলেও সহকারী কমিশনার ও তদন্ত কর্মকর্তা নীলফামারী ও রেঞ্জ বন কর্মকর্তা আর আসেন নাই। অজ্ঞাত কারনেই তারা অনুপস্থিত থাকেন। সেই থেকে জমির মালিকগণ সরকার পক্ষের কাছ থেকে ন্যয় বিচার প্রাপ্তী থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
ব্যাক্তি জীবরে বনায়নের প্রভাবঃ বন ভিভাগের এই বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে শতাধিক পরিবার ভুমিহীন হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে প্রজা হিসেবে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছে। কৃষক তার কৃষি পেশা হারিয়ে দিন মজুরে পরিনত হয়েছেন। অনেকে উদ্বাস্ত হয়ে বিভিন্ন শহরে গিয়ে রিক্সা-ভ্যান চালনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিগত বিশ বছরে বন বিভাগ অধিকাংশ গাছ কর্তন করে বিক্রি করেছেন জমির মালিকপক্ষ জমির ক্ষতিপুরণ কিংবা গাছ বিক্রির শেয়ার কোনটায় পায় নাই।
বর্তমানে মোট জমির ২০% এর মধ্যে কিছু গাছ আছে বাকী ৬০% আবাদ যোগ্য ২০% অনুর্বও পতিত জমি হিসেবে পরে আছে। আবাদ যোগ্য কৃষি জমি গুলো বন বিভাগের কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাঝে মৌখিক ভাবে বার্ষিক লীজ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ ভাবে আয় করে আসছেন। বনের মামলায় অনেক হয়রানীর স্বীকার হয়েছে তাই কেহ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
রেকড সংশোধনঃ ১৯৯৬-৯৭ সালের মাঠ জরিপ কালে বন বিভাগ কথিত গেজেট দেখিয়ে বন মন্ত্রণালয়ের নামে উক্ত জমি রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। জমির মালিকরা প্রয়োজনী সকল কাগজপত্র নিয়ে সেটেলমেন্টে আপত্তি জানালেও  জমির প্রকৃত মালিকদের আবেদন গ্রহণ করা হয় নাই। বন বিভাগ গেজেট দেখিয়ে মালিকের নাম বাদ দিয়ে বন মন্ত্রণালয়ের নামে উক্ত জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন।

ঋুমি মালিকদের নামে হয়রানীমুলক মিথ্যা ঃঅনেক পরিবার জমি উদ্ধার করতে গিয়ে মামলার শিকার হয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছেন। যারাই প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে গাছ কারার মিথ্যা মামলা এমন মামলার সংখ্যা গোমনাতী ও ভোগডাবুড়ী ইউনিয়ন মিলে শতাধীক এবং আসামীর সংখ্যা ৩-৫ শতাধীক। মামলা গুলো দীর্ঘ দিন চলার পরে খারিজ হয়ে যায় কোন মামলায় শেষ পর্যন্ত রায় হয় না
জমির মালিকদের দাবীঃ
    ক্ষতিপুরণসহ জমির মালিকানা ফেরত দিতে হবে।
    বন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে জমির বর্তমান প্রকৃত ওয়ারীশদের নামে রেকর্ড সংশোধন করা।

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 9218021333294104828

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item