রংপুর সিটি কর্পোরেশন-ট্রাফিক বিভাগের রশি টানাটানিতে ন্যূজ্ব অটোরিকসা। নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব কার!

হাজী মারুফ,রংপুর ব্যুরোঃ অদক্ষ চালক দিয়ে অটো চালানো, রাস্তার যেখানে সেখানে দাড় করিয়ে যাত্রী উঠানো, যত্রতত্র ইউটার্ন নেয়া, যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরন করা, যানজটের সৃষ্টি করা ইত্যাদী নানাবিধ বেআইনি কার্যকলাপের দ্বারা বর্তমানে রংপুর বাসির অন্যতম  প্রধান সমস্যায় রুপান্তরিত হয়েছে অটোরিকশা। একসময় স্বল্পমূল্যে যাত্রী পরিবহন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ইত্যাদির মাধ্যমে অটোরিকসা বেশ জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে এটাই রংপুরবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

রাস্তাঘাটে  সবসময় আইন অমান্য করে সমস্যা সৃষ্টির মূল হোতা এই অটোরিকশা গুলোকে আইনে আওতায় আনার দায়িত্ব কার?  ট্রাফিক বিভাগের নাকি সিটি কর্পোরেশনের এবং কেন এগুলোকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হচ্ছেনা  এটা নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
কোন প্রকার নিয়ম-কানুন না থাকায় রংপুর মহানগরে অল্প সময়ের ব্যবধানে বেড়ে গেছে  অটোরিক্সার সংখ্যা। যানজট কমানোর জন্য রংপুর সিটি কর্পোরেশন রাস্তা প্রসস্ত করলেও অটোরিকশার কারনে যানজট প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে সেখানে যাত্রী উঠা নামা করানো, রাস্তা দখল করে পার্কিং করা, যেখানে সেখানে ইউটার্ন নেয়া ইত্যাদি বেআইনী কার্যকলাপের দ্বারা প্রতিনিয়ত জনচলাচলে দুর্ভোগের সৃষ্টি করা  এসব অটো রিক্সার কারনে রংপুরের ট্রাফিক বিভাগও পড়েছে চরম বেকায়দায়।
রংপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শামসুল আলম প্রথম খবরকে জানান, রংপুরে প্রায় ২০ হাজার অটোরিক্সা চলাচল করে। এদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজারেই লাইসেন্স বিহীন। ভেহিকেল আইন অনুযায়ী আইন অমান্যকারী অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের উপর বর্তায় না। এটার সম্পুন্ন দায় দায়িত্ব রংপুর সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু জনসাধারনের চলাচল নির্বিঘœ করতে যদি আইন লংঘন কারি অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করে তাহলে উল্টো ট্রাফিক বিভাগকেই সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
এর কারন হিসেবে তিনি বলেন, রংপুরে যারা অটো রিক্সা চালায় তারা মূলত সবাই অশিক্ষিত। এরা আগে হয় রিক্সা চালাতো, ভ্যান চালাতো নয়তো কামলা খাটতো। এদের তো ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকার কথা না। এখন একজন অটোরিক্সা মরা গরুর মতো রাস্তার মাঝখানে অটো দাড় করিয়ে রেখেছে আমি যখন তার অটোর পিছনে লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি দিবো তখন সেই উল্টো আমার সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এমনকি আমাদের কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সাথে মারামারির মতো ঘটনাও পর্যন্ত ঘটেছে।  এ কারনে আমাদের ট্রাফিক পুলিশরা অটো চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
রংপুর  মহানগরীতে ঘুরে দেখা গেছে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীর মেডিকেল মোড়, কাচারীবাজার, সিটি মার্কেট, সুপার মার্কেট, পায়রাচত্বর, জাহাজ কোম্পানির মোড়, শাপলা চত্বর,  লালবাগ, টার্মিনাল ইত্যাদি স্থানে অটোরিক্সার কারনে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে সেই সাথে সাধারন পথচারীদেরও ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। রংপুরের ট্রাফিক বিভাগের দেয়া তথ্য মতে অটোরিক্সার সম্পুন্ন দায়িত্ব পড়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের উপরে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আইন অমান্যকারী অটোর বিরুদ্ধে রংপুরের সিটি কর্পোরেশনকে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করতে দেখা যায়নি।
একাধিক পথচারি বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন রাস্তা প্রসস্ত করেছেন জনসাধারনের জন্য নয়। রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে অটোচালকদের জন্য। সুতরাং তারা যদি রাস্তার মাঝখানে অটো নিয়ে শুয়েও থাকে তাও কারো কিছু করার নেই।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী  এ পর্যন্ত রংপুরে ৩৫শ’ অটোর লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। আবার তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, রংপুর মহানগরীতে প্রায় ২০ হাজার অটোরিক্সা চলাচল করে। সুতরাং সে তথ্য অনুযায়ী রংপুরে প্রায় ১৭হাজার নিবন্ধন বিহীন অটো চলাচল করে। এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়ম করে দেয়া হয়েছে যে, অটো চালকদের প্রদানকৃত লাইসেন্স কপি অটোতে সংযুক্ত করে দেয় হবে। যেহেতু অটোতে কোন চেসিস কিংবা ইঞ্জিন নাম্বার থাকে না। তাই এই অটোগুলোকে আলাদাভাবে সনাক্ত করনের  কোন উপায় সিটি কর্পোরেশনের হাতে নেই। ফলে দেখা যায় যদি সিটি কর্পোরেশন লাইসেন্স বিহীন কোন অটো আটক করে তাহলে সেই অটো মালিক অন্য কোন অটোর লাইসেন্স নিয়ে এসে  তার লাইসেন্স হিসাবে চালিয়ে দিয়ে অটো ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এক অটো চালকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, তার মহাজন সিটি কর্পোরেশন থেকে দুটো লাইসেন্স নিয়েছে তার বিপরীতে তার অটো আছে ১৫টি।  যেহেতু এগুলোর সনাক্ত করনের কোন উপায় নেই তাই সিটি কর্পোরেশনেরও কিছু করার নেই।
এদিকে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে অটো চালকগন। অটো চালকদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় প্রতিনিয়ত তাদের দ্বারা নানা দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এক হিসাবে দেখা যায় বিগত তিন বছরে রংপুরে যে সকল সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগেই অটোরসাথে। এই দুর্ঘটনার মাত্রা দিন দিন বেড়েই  যাচ্ছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু প্রথম খবরকে জানান, অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রনের জন্য আমি ইতোমধ্যে রংপুরের এসপি, ডিসির সাথে বৈঠক করেছি। ইতোমধ্যে অটো ষ্ট্যান্ড ও যাত্রী উঠানোর জন্য রংপুরে সিটি কর্পোরেশনের ভিতরে প্রায় ২৫টি যায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো যায়গাগুলো থাকবে সম্পুন্ন পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে।  এর বাইরে যেন অটো চালকরা যেখানে সেখানে অটো দাড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করতে না পারে সেজন্য পুলিশ বিভাগ মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবে। তা ছাড়া রাস্তার দু’ধার জুড়ে ছোট আকারে বেরিকেড তৈরি করা হবে যাতে অটো রাস্তা বন্ধ করে দাড়াতে না পারে। আর নিবন্ধনহীন অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রনের জন্য ইতোমধ্যে অটোরিকশার ডাটাবেজ, এবং ডিজিটাল নাম্বার প্লেটের ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে রংপুরের সকল লাইসেন্স প্রাপ্ত অটোতে এই নাম্বার প্লেট সরবরাহ করা হবে। আর নতুন করে কোন অটোর লাইসেন্স দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত  আমাদের নেই। সুতরাং আমি মনে করছি লাইসেন্স বিহীন এই অটোগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমুুলক ব্যবস্থাগ্রহন এবং অটো স্টপেজগুলো নির্মান হলেই এই সমস্যার সমাধান অনেকাংশেই কমে যাবে ববে বলে আমি মনে করি।
এব্যাপারে রংপুর জেলা ব্যাটারী চালিত অটো রিকসা মালিক-শ্রমিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার কবীর সুমন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রেজিষ্টেশন বিহীন অবৈধ অটো রিকসা বন্ধ করার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বারং বার রসিক মেয়র ও রংপুরের ডিসি, এসপির নিকট আহবান করেও কোন সুফল পায়নি। ফলে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। য়ার ফলশ্রুতিতে গত ১৩মে সমিতির পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশন ঘেরাওসহ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এসময় আমরা সিটি মেয়রকে সকল সমস্যা নিরসনের জন্য ৭২ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। অথচ আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।

পুরোনো সংবাদ

জনদূর্ভোগ 6385998739827116889

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item