রংপুর বিভাগীয় স্টেডিয়াম সংস্কারের নামে পুকুর চুরি

হাজী মারুফ
রংপুর প্রতিনিধি -


দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকার পর  রংপুর স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু হলেও সংস্কার কাজের মান নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী কাজের ঠিকমত দেকভাল না করার কারণে ঠিকাদাররা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন। স্টেডিয়াম সংস্কার কাজে দুর্নীতি হওয়ায় এখানকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্টেডিয়াম সূত্রে জানা যায়, ৪ মাস  আগে জাতীয় ক্রিড়া পরিষদ রংপুর বিভাগীয় স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য দরপত্রের আহবান করে। সেই দরপত্র অনুযায়ী কাজ পায় কুষ্টিয়ার আরফান কন্সট্রাকশন এবং ঢাকার খলিল কন্সট্রাকশন। ৬ মাসের মধ্যে সমস্ত সংস্কার কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজের প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দু’টো।

ঠিকাদার খলিলের মালিকানাধিন খলিল কন্সট্রাকশনের দায়িত্বে ছিলো স্টেডিয়ামের সিমানা প্রাচীর নির্মাণ, প্রধান গেট নির্মাণ ও গ্রিল রংকরণের কাজ ।
কিন্তু স্টেডিয়ামে সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত স্টেডিয়ামের যে জায়গায় প্রধান গেট নির্মাণের কথা ছিলো সেখানে একটা ইটও গাথা হয়নি। সেখানে আগেই যে গেটটি ছিলো সেটা তারা রং আর চুনের প্রলেপ নিয়ে নতুন নির্মিত গেট হিসেবে চালিয়ে দেবার পাঁয়তারা করছে। স্টেডিয়ামের ভিতরে নিরাপত্তা গ্রিল রং করার কথা থাকলেও কমদামী সিলভার কালার দিয়ে এক কোট রং করেই কাজের সমাপ্তি টানা হয়েছে। তারা শুধু মাত্র গ্রিলই রং করেছে গ্রিলের উপরের কাটা তারের বেড়াগুলো এবং সেগুলোর স্টিল পিলারগুলো রং করার কথা থাকলেও সেগুলোতে কোন প্রকার রং করা হয়নি। অপরদিকে স্টেডিয়ামে সামনে দক্ষিণ পার্শে হনুমান তলা রাস্তার পাশ দিয়ে এবং স্টেডিয়ামে পিছনে উত্তর পাশে চিকলীর বিলের পাশে আগে থেকেই প্রাচীর নির্মাণ করা  থাকলেও স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে হনুমানতলা বাজারের পিছনে জমি বেদখল হওয়ার অজুহাত দিয়ে কোন প্রকার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি। বেদখল হওয়া এ জমিগুলো পুনঃদখল করার জন্য প্রকৌশলীর তরফ থেকে জেলা প্রশাসক ও সিটি কর্পোরেশনের কাছে কোন প্রকার চিঠিও দেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে  আগে থেকে নির্মিত প্রাচীরগুলোতে রং করে সেগুলো নতুন করে নির্মিত বলে চালিয়ে দেয়ার ছক কষছেন ঠিকাদার ও প্রকৌশলী।
৫৯ লাখ টাকা ব্যায়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারী রংকরণ, গ্যালারীর পাশে সড়ক নির্মাণ, প্যাভেলিয়ান ভবনের বৈদ্যুতিক কাজের সংস্কার, স্যানিটেশন সংস্কারের দায়িত্ব পায় আরফান কন্সট্রাকশন। তাদের কাজের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির ছাপটি একেবারেই সুস্পষ্ট। আর এক মাসের মধ্যেই কাজের সমাপ্তি টানার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ তাদের বাকি রয়েছে। গ্যালারী, প্যভিলিয়নের দেয়ালে এক স্তর করে ওয়েদার কোট মারার কাজ ইতোমধ্যে তারা শেষ করেছে। স্টেডিয়ামের সামনের অংশে পরিত্যাক্ত প্যাভিলিয়ন যেটি ভেঙ্গে প্রবেশদ্বার তৈরির কথা ছিলো এ ক্ষেত্রে তারা সেটাতেও ওয়েদার কোর্ট ও চুন দিয়ে অতিরিক্ত বিল আদায়ের পাঁয়তারা করছে। স্টেডিয়ামের গ্যালারীর নিচ দিয়ে প্রায় ১২০০ ফুট রাস্তা তৈরি করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা রাস্তা তৈরি করেছে মাত্র ৫০০ ফুট। জমি বেদখল হওয়ার অজুহাত দিয়ে তারাও এই ৫০০ ফুটেই তাদের কাজের সমাপ্তি টেনেছে। কিন্তু এই ৫০০ ফুট রাস্তাতেও ঠিকাদাররা ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। খোয়া ঢালাই এ রাস্তায় সঠিক গ্রেডের রড ও  সঠিক অনুপাতে সিমেন্ট না দেয়ার মাধ্যমে অত্যন্ত নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে এ রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইলেকট্রিক্যাল ও স্যানিটেশনের কাজ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা এ কাজে হাতেই দিতে পারেনি।
রংপুরের গণমানুষের নেতা এবং কবি হায়াৎ মাহমুদ মানিক সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল সিটি কর্পোরেশন। সেই সিটি কর্পোরেশনে ক্রিড়া ক্ষেত্রের সুতিকাগার রংপুর স্টেডিয়াম নিয়ে দুর্নীতি আমরা কখোনেই মেনে নিবো না। এটা নিয়ে যদি আমাদের আন্দোলনে নামতে হয় তাহলে আমরা সেটাই করবো। এ ব্যাপারে ঠিকাদার খলিল মিয়া ও শাহাজান বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান জাতীয় ক্রিড়া পরিষদের প্রকৌশলী এবং রংপুর জেলা ক্রিড়া সংস্থার কর্তা ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কাজ করা হচ্ছে। কাজে কোন অনিয়ম করা হয়নি বলে জানান তিনি।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item