আকষ্মিক ভাবে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি আনন্দের জোয়ারে ভাসছে কৃষক

জাহাঙ্গীর আলম রেজা, ডিমলা প্রতিনিধিঃ  শুক্রবার রাত থেকে দেশের সর্ববৃহত সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পানিতে টই টুম্বুর হয়ে উঠেছে। তিস্তা নদীতে উজনের ভারতের গজল ডোবা থেকে ঢল নেমে পানিতে টই টম্বুর হয়ে প্রান ফিরে পেেেয়ছে মরা তিস্তা । শুকিয়ে থাকা তিস্তায় হু-হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নব যৌবনে ফিরে এসেছে তিস্তা। নদীজুড়ে চলছে স্রোত ধারা। গত মার্চ মাসে তিস্তার নদীর পানি প্রবাহ
গড়ে ছিল ১০০ কিউসেক। গত বৃহস্পতিবার পানি প্রবাহ ১০০ কিউসেক থাকলেও শুক্রবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্ট উজানের পানি প্রবাহের বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বেলা ৩টায় এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৮শত কিউসেকে আসে। শনিবার সকালে পানি আরও বৃদ্ধিপেয়ে ২হাজার কিউসেকে দাড়ায়। তিস্তার ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় কৃষকরা ভরপুর পানি পেয়ে আনন্দে আতœহারা হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানায় গত বছরে এ সময় তিস্তায় ৩৫০ কিউসেক পানি পাওয়া গিয়েছিল। তিস্তা পাড়ের ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর চরের নৌকার মাঝি হারুন শেখ (৪০) জানায়, তিস্তা নদীতে যেন জোয়ার শুরু হয়েছে। এ জোয়ারে তিস্তা ফুলে ফেপে উঠছে। প্রধান খাল, শাখা খালে পানিতে ভরে গেছে। শনিবার দুপুরে দেখা যায় উজান থেকে তিস্তা নদী বাংলাদেশের প্রবেশ পথ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্টে দিয়ে স্রোতধারায় হু-হু করে পানি আসছে। যা দ্রুত প্রবাহে চলে যাচ্ছে ভাটির দিকে। গত কয়েক দিন আগেও নদীর বুকে যে ধু-ধু বালুচর দেখা গেছিল, তা যেন নিমিষেই নদীর পানিতে চাপা পড়ে যাচ্ছে। নদীর কুল কিনারা ভরে উঠছে ধীরে ধীরে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে তিস্তার পানি কমতে কমতে দাঁড়িয়েছিল  ১০০ কিউসেকে। অথচ এ নদীতে স্বাভাবিকভাবে গড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার কিউসেক পানি থাকা প্রয়োজন। গত ২৩ ফেব্র“য়ারী থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করে। এ অবস্থা চলে ২এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে হঠাৎ করে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির বিষয়টি অবাক করে দিয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে। তিস্তার পাড়ের আবুল কাশেম জানায়, তিস্তা নদীকে যখন দেখি শুকায়ে যায় তখন হারিয়ে যাওয়া জমিজিরাত বালুর চরে চোখে পড়ে বুকটা খাঁ-খাঁ করে উঠে। পুর্ব ছাতনাই গ্রামের হারুন-অর রশিদ জানায়, ৩ এপ্রিল শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ শুনতে পাই তিস্তা নদী থেকে ¯্রােতের শব্দ বাতাসে ভেসে আসছে। অবাক হয়ে ছুটে যাই নদীর পাড়ে। দেখতে পাই উজান থেকে তিস্তার পানি শো-শো শব্দে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এখন তিস্তা নদী দেখে খুব ভাল লাগছে তিস্তায় পানি ভরে উঠছে। তিস্তা পাড়ের ভাষানীর চরের নৌকা মাঝি মফিজার রহমান (৪২) বললেন, ভারত হয়তো তাদের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় পানির জোয়ার বেড়ে গেছে। তিস্তা সেচ ক্যানেলের ধারে নাউতরা গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন ( ৪৩) জানায়, হঠাৎ আজ তিস্তা সেচখাল পানিতে ভরে গেছে। এখন দেখছি পানি রাখার জায়গা নাই। এই পানি খুব উপকারে আসছে। এখন বোরো ধানের শীষ ধরেছে। এই পানি পেয়ে ধানের তেগুলো তরতাজা হয়ে ফুটে উঠেছে। তিস্তার পলির পানি আরে ভু-গর্ভের সেচের পানির মধ্যে ফারাক আছে। তিস্তার সেচে ফলন ভাল হয়। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুরুজ্জামান বলেন, তিস্তা নদীর পানি এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার দুপুর ১২টায় তিস্তায় পানি প্রবাহ ছিল ২ হাজার কিউসেক। বর্তমানে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বংপুরের গঙ্গাচরা, দিনাজপুরের চিনির বন্দর পর্যন্ত সেচ খালে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলা প্রায় ৬৫ হাজারহেক্টর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি জানান এবার খরিপ ১ মৌসুমে ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু সেচ দেয়া যায় ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টরে। তিনি বলেন গত ১৩ এপ্রিল থেকে তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে দেড় হাজার কিউসেকের উপরে চলে যায়। এরপর ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার কিউসেকের উপরে চলে যাওয়ায় সেচখাল গুলো ভরিয়ে দেয়া হয়েছে।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item