সরকারি খাস জমি নিয়ে টানা-হ্যাচড়া আটকে আছে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ : প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

আশরাফুল হক কাজল ঃ নিলফামারী জেলাধীন ডোমার উপজেলার চিলাহাটি গার্লস্ স্কুল এন্ড কলেজে ক্যান্টিন নির্মাণ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাথে চলছে দ্ব›দ্ধ। শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের ওপর মৌখিক নিষেধাজ্ঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। চিলাহাটি মার্চেন্টস্ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন শিক্ষক সমিতি।
চিলাহাটি গার্লস্ স্কুল এন্ড কলেজ এবং চিলাহাটি মার্চেন্টস্ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চিলাহাটি বাজারের প্রাণকেন্দ্রে  অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গত ফেব্রুয়ারী মাসে চিলাহাটি গার্লস্ স্কুল এন্ড কলেজ ক্যান্টিন নির্মাণ শুরু করলে ভোগডাবুরী ও কেতকীবাড়ী বহুমূখী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কয়েকজন শিক্ষক ক্যান্টিনের পিছনের প্রায় ২০ ফুট জায়গা সমিতির ব্যবহারের জন্য দাবী করলে কলেজ কর্তৃপক্ষ অবেদনপত্র আহ্বান করেন। এনিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং সমিতি ইউনও বরাবরে অভিয়োগ দাখিল করে। এমতাবস্থায় ইউএনও সাহেব মৌখিক নির্দেশে এস.এস.সি পরীক্ষার পর সমস্যার সমাধান করবেন মর্মে কাজ বন্ধ রাখেন। কাজ বন্ধ থাকলেও সমিতি চিলাহাটি মার্চেন্টস্ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবীতে কতিপয় অভিযোগ সম্বলিত একটি অভিযোগপত্র থানা শিক্ষা অফিসার বরাবর দাখিল করেন।
এনিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনের জায়গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হবে, এখানে কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যান্টিন নির্মাণ করবেন। তাই তারা এনিয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। প্রধান শিক্ষিকা যেহেতু ক্যান্টিন নির্মাণে বাধা প্রদান করেননি সেহেতু তার বিরুদ্ধেও তারা অভিযোগ করেছেন। জায়গাটা সমিতির কিনা তা জানতে চাইলে তারা বলেন-যেহেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা সেহেতু সমিতি ব্যবহার করতেই পারে।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ পারভীনের সাথে কথা বলে জানা যায়- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উক্ত বিল্ডিংটি ২০০৬ সালে স্থাপিত হয়। তার আগে সেখানে ফাঁকা ছিল এবং রাস্তার ধার দিয়ে দোকান ছিল। কাগজ-পত্রে উক্ত জায়গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়, খাস জমি। তিনি ২০১১ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর উক্ত জায়গা কলেজের দখলে ছিল বলে জানান। ক্যান্টিন নির্মাণের ব্যাপারে তিনি বলেন-কলেজ কর্তৃপক্ষ টিফিন পিরিয়ডে উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাড়ী থেকে নিয়ে আসা টিফিন খাওয়ার সুবিধার্থে ক্যান্টিনটি নির্মাণের প্রস্তাব করলে তিনি বিষয়টি তার কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন এবং কমিটি উক্ত ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে স্বাগত জানান বিধায় তার বাধা দেয়ার প্রশ্নটি অবান্তর। তার বিরুদ্ধে সমিতি কর্তৃক আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেনÑআমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিমূলক। অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষরকারী ৮০ ভাগ শিক্ষকই অত্র প্রতিষ্ঠানে কোনদিন আসেননি, যারা আসেন তারাও কোনদিন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। কলেজের অধ্যক্ষ আমার স্বামী হওয়ায় তারা আমাকে হয়রানী করছেন।
বিদ্যালেেয়র সভাপতি সাবেক প্রকৌশলী জনাব আশরাফ আলীর সাহেবের সাথে কথা বললে তিনি বলেনÑ জমি যেহেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয় সেহেতু ক্যান্টিন নির্মাণের ব্যাপারে আমাদের কোন অভিযোগ নেই বরং সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হবে। প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা মোটেও ঠিক হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আইউব আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেনÑশিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিজ অর্থায়নে উক্ত ক্যান্টিন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গভর্ণিং বডি গ্রহণ করেন। ক্যান্টিনটি যে জায়গায় নির্মিত হচ্ছে সেটি খাস জমি হলেও অত্র প্রতিষ্ঠানের ভোগ-দখলে রয়েছে ১৯৬২ সাল থেকে। প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দের জন্য ইতোপূর্বে আবেদনও করা হয়েছে। অতীতে সেখানে দোকান ছিল যার অর্ধেকগুলো ছিল অত্র প্রতিষ্ঠানের এবং বাকীগুলো স্ব স্ব দোকানদারগণ ভোগ করতেন। এমতাবস্থায় উক্ত দোকান ঘেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিল্ডিং নির্মাণ করা হয় যার প্রায় অর্ধেক জায়গা কলেজের। বিনিময়ে পশ্চিম দিকে তারা সে পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দেন। গত ২০০৮ সালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে সরকার সব দোকান ভেঙ্গে দিয়ে তৎকালীন ইউএনও সাহেব পুরো জায়গা কলেজ কর্তৃপক্ষকে দখলে দেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ বাউন্ডারী ওয়াল দিয়ে দেয়। উক্ত জমির উত্তর দিকে সমিতির ০১ শতাংশ জমির ওপর তাদের দোকান ঘর থাকায় তারা দ্বিতল করার নামে একটি অস্থায়ী সিড়ি স্থাপনের মৌখিক আবেদন করলে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ সিড়ি নির্মাণের অনুমতি দেন। যেহেতু তাদের সিড়ি আছে সেহেতু জায়গাটা তাদের দখলে ছিল বলে তারা দাবী করছেন।
ক্যান্টিন সংক্রান্ত ব্যাপারেউভয় প্রতিষ্ঠানের কিছু সংখ্যক অভিভাবকের সাথে কথা বললে তারা বলেনÑ ক্যান্টিনটি আমাদের বাচ্চাদের টিফিন পিরিয়ডে খাওয়ার ক্ষেত্রে ভাল ভূমিকা পালন করবে। আমরা কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমিতিভূক্ত কতিপয় শিক্ষক জানিয়েছেনÑযারা আজ অন্দোলন করছেন শুরুতে তারাই ক্যান্টিন নির্মাণের বিষয়টিকে ইতিবাচক আখ্যায়িত করে কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করেিেছলেন। কিন্তু কাংখিত জায়গা না পাওয়ায় পরবর্তীতে ক্যান্টিনটি শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করবে মর্মে তাদের শ্লোগান স্ববিরোধী।

কলেজের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জনাব মুরাদ আলী প্রামাণিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-সমিতির শিক্ষকরা আমাকে এব্যাপারে অবহিত করলে আমি তাদেরসমস্যা সমাধানের জন্য আশ্বাস দেই কিন্তু তারা আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন না করে অন্যত্র ছুটোছুটি শুরু করেন। সিড়ি দিয়ে ওঠার জন্য আমরা ৪ ফুট মাপের একটি রাস্তা রেখে ক্যান্টিন নির্মাণ করেছি কিন্তু তারা বাহির দিকে রাস্তা চেয়েছিল তাও আমি বা আমরা মেনে নিয়েছি। তারপরও তারা নানাবিধ কর্মকান্ড করে বেরাচ্ছে এমনকি আমাদেও শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজের ওপরও অভিযোগ করেছে। এমতাবস্থায় শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে অত্র প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ১৩০ জন শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষে পাঠদান দিতে গিয়ে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি সমিতির অহেতুক হয়রানীমূলক কর্মকান্ডের ব্যাপারেসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 1719512219512431965

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item