নানা সমস্যায় জর্জরীত নীলফামারী জেলার একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধি স্কুল

আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি),স্টাফ রিপোর্টার। নানা সমস্যায় জর্জরিত জেলার একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধি স্কুল। শ্রেণী কক্ষ থেকে শুরু করে টেবিল চেয়ার, বেঞ্চ, শিক্ষা উপকরণ অভাবে প্রতিবন্ধিদের উপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম করানো যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটিতে।
সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে তথ্য প্রযুক্তির সম্পন্ন ক্লাশ রুম চালু হলেও জেলা প্রতিবন্ধিদের প্রতিষ্ঠানটি আজ পর্যন্ত পায়নি একটি কম্পিউটারও। অভাব রয়েছে যানবাহন, জায়গা আর আসবাবেরও।
নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে ৩৩শতাংশ জায়গার উপর ২০০১সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জেলার একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধি স্কুল।
১৯৫জন শিক্ষার্থী আর ১২জন শিক্ষক নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয় প্রতিষ্ঠানটির। জেলা সদর ছাড়াও কিশোরগঞ্জ উপজেলা এবং অন্যান্য জায়গা থেকে প্রতিবন্ধিরা নিয়মিত আসছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসলেও ২০০৮সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতনের দায়িত্ব নেয় সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়। শিক্ষকরা শুধুমাত্র বেতন পেয়ে থাকলেও আনুসঙ্গিক কোন সুযোগ সুবিধা তৈরি হয়নি অদ্যাবধি।
সরেজমিনে দেখা গেছে সকাল নয়টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে শিক্ষা কার্যক্রম। সকাল দশটায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন আর জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। তবে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা আসেনি উপবৃত্তি কিংবা স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায়।
শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, পার্শ্বের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিস্কুট পেলেও আমরা পাচ্ছি না, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির সুবিধা পেলেও আমরা পাচ্ছি না। দুপুরে স্কুলের স্যারেরা আমাদের বিস্কুক দিয়ে থাকেন।
অবিভাবক হামিদা বেগম ও শিল্পি বেগম জানান, বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে গেলে সেখানে থাকতে চায় না, কারণ সেখানে প্রতিবন্ধিদের ধরে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। শুধ পড়াশোনা নয় প্রতিবন্ধিদের সঙ্গিতসহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে তারা সেখানে পুরো সময় কাটাতে পারতো।
জানা গেলো প্রতিবন্ধিদের স্ট্যান্ড সাইকেল, প্যারালালবার, পিটি প্যারেডের জন্য ঢোল, হারমোনিয়ামসহ অন্যান্য সামগ্রী না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে। ভাঙ্গাচোরা ঘরে দেয়া হচ্ছে পাঠদান। পর্যাপ্ত টেবিল চেয়ার না থাকায় গাদাগাদি করে বসে ক্লাশ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বর্তমানে প্রস্তুতিমুলক, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, বৃত্তিমুলক ও গৃহভিত্তিকে ১১৬শিক্ষার্থী রয়েছে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানটিতে। তবে দুর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার জন্য পরিবহণ অপ্রতুলতার কারণে নিয়মিত আসছে না অনেক শিক্ষার্থী। ১টি স্কুল ভ্যান থাকলেও আরেকটি শ্যালো চালিত ভটভটি যোগে ঝুঁিক নিয়ে আনা নেয়া করা হচ্ছে প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ্য থেকে একজন চালকের মাসিক বেতন পরিশোধ করা হলেও অপরজনকে দেয়া শিক্ষকদের বেতন থেকে কর্তন করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ছফিদুল ইসলাম জানান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম সেটা এখোনো পুরোপুরি সফলতা দেখতে পারিনি। কারণ নানা সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় শিক্ষা কার্যক্রম করানো যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, সরকার সুদৃষ্টি দিলে প্রতিষ্ঠানটির চেহারা বদলে যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মুকুল হোসাইন নানা সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, গেল অর্থবছরে(২০১৩-২০১৪) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আর্থিক সহযোগীতায় এবং জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে দেড়লাখ টাকা ব্যয়ে কিছু উন্নয়ন কাজ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে অবকাঠামোসহ শিক্ষা উপকরণ এবং আধুনিক মানে উন্নিত করা প্রয়োজন।
নানা সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আসতে অনিহা প্রকাশ করে তাদের স্কুলে আসার প্রবণতা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সেজন্য প্রয়োজন স্কুল ফিডিং আর উপবৃত্তির সুবিধা। তাছাড়াও ডিজিটাল পদ্ধতিতে শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করানো গেলে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নুতন ভাবে গড়ে উঠবে বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অভাবের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রতিবন্ধিদের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ প্রদান এবং উপবৃত্তি ও স্কুল ফিডিং’র আওতায় আনার বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 7181359786575879569

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item