নকলের শহর সৈয়দপুর : টেলিভিশন থেকে সার সবই হয়

মোঃ জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি ঃ
নকল পন্য তৈরির শহর হল নীলফামারীর সৈয়দপুর। রেডিও, টেলিভিশন, মটর গাড়ীর যন্ত্রাংশ, মশার কয়েল থেকে শুরু করে সার সবকিছু হয় এ শহরে। কেউ কেউ বলছেন, সৈয়দপুরে নকল মানুষ রূপি রোবটও তৈরি করা সম্ভব।
সৈয়দপুরে যে বেসুমার সামগ্রী তৈরি হয় এ তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কিছু অভিযান চালানো হয় এ শহরে। যৌথ বানিহীর অভিযানে সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন অলিগলির অভ্যন্তর থেকে সন্ধান মেলে নকল সারকারখানা, ডিটারজেন্ট পাউডার ও সাবান তৈরির কারখানা, নকল বিস্কুট ফ্যাক্টরী, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ও টেলিভিশন তৈরির কারখানা। এমন কি ভেজাল পন্য তৈরির অপরাধে শতাধিক মামলা হয়েছে সৈয়দপুর থানায়। নকল পন্য তৈরির জন্য উৎপাদকদের জেল হাজতেও পাঠানো হয়েছিল। তখন অনেকে জানতেন না সৈয়দপুরে এমন কিছু নকল হয় যা অবিশ্বাস্য ওই সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তথ্য মেলে শহরের টি, আর সড়কের একটি গোডাউনে আবিস্কার হয় নকল সার কারখানা, বঙ্গবন্ধু সড়কের বিসিক এষ্টেট এলাকায় একটি নকল রোলার তৈরির কারখানা। রংপুর অঞ্চলের র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব-৫) অভিযানে ওইসব কারখানা আবিস্কার হয়। তবে এরচেয়েও আরও বেশি অবাক হন সৈয়দপুরবাসী ২০০৯ সালের ৬ মে। ৩টি পয়েন্টে হানা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে অনেক অজানা তথ্য। হুবহু চায়না ফনিক্স ও ভারতীয় হিরো সাইকেলের বিশাল কারখানা আবিষ্কার করা হয়।
সূত্র জানায়, সৈয়দপুরের একজন আমদানীকারক চীন ও ভারত থেকে বাই সাইকেল আমদানী করে সারা দেশে সরবরাহ করেন। দেশে সাইকেলের ব্যাপক চাহিদা বিবেচনা করে একটি অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সৈয়দপুর শহরে কমপক্ষে ৫০টির মত নকল সাইকেল কারখানা গড়ে তুলেছেন। সৈয়দপুরে তৈরী এসব নকল সাইকেল যদি প্রকৃত হিরো ও ফনিক্স কারখানার মালিকদের দেখানো হয় তারা চিনতেও পারবেন না এসব আসল না নকল। ওই নকল সাইকেলগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশের হাটবাজারে।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সহঃসভাপতি মতিয়ার রহমান জানান, সৈয়দপুরে বিপুল পরিমাণ নকল সাইকেল তৈরী হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। এরফলে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছেন। তিনি মনে করেন সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে সৈয়দপুরে সাইকেল শিশুপার্ক গড়ে উঠতে পারে। এজন্য সরকারকেই আগ্রহী হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন ইন্ডাষ্ট্রি গড়তে নানাবিধ সমস্যায় উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে। নিয়মনীতি সহজিকরণ ও ব্যাংক ঋণের সুবিধা নিশ্চিত হলে সৈয়দপুরেও নকল বাজীর অপবাদ থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈয়দপুর কাষ্টমস অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, সৈয়দপুরে নকল সাইকেল উৎপাদকরা বিগত ১৫ বছরে ৩০ কোটি টাকারও বেশী রাজস্ব ফাকি দিয়েছেন। নকল কারখানার হোতাদের খুজে বের করে শাস্তির আওতায় নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দপুর পৌর পরিষদের বেশ কয়েকটি সূত্র সাংবাদিকদের জানান, কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা সৈয়দপুরের ৭-৮জন সাইকেল ব্যবসায়ীকে নেপথ্যে থেকে মদদ দিয়ে চলেছেন। ওইসব ব্যবসায়ীরা আমদানীর আড়ালে নকল সাইকেল উৎপাদনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কারা এসব কারবারে জড়িত এ প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, সঠিক তদন্ত হলে পুলিশই বলতে পারবেন তাদের তৎপরতায় সৈয়দপুর নকলের রাজধানী হয়ে উঠেছে। তবে তারা সৈয়দপুরে শিল্প সম্ভবনাকে ইতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে বলেন, সৈয়দপুরে সব রকম পন্য উৎপাদনের দক্ষ কারিগরও রয়েছেন। শুধু প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। 

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 4903007828807969959

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item