ডিমলায় তিস্তার পাড়ের চরাঞ্চলের প্রানী সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি নিজে সাবলম্বী হয়েছে সুফিয়া বেগম

জাহাঙ্গীর আলম রেজা, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি ঃ নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার পাড়ের অসহায় সম্বলহীন নারী সুফিয়া বেগম নিজের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি চর অঞ্চলের হতদরিদ্রদের পশুপালনের বিশেষ ভুমিকা রাখছে। একজন নারী হিসেবে গ্রামে প্রানী সম্পদ রক্ষায় বিশেষ ভুমিকা রাখছে সুফিয়া বেগম।
 তিস্তা পাড়ের সুফিয়া বেগম গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যাকশিনেসন করে একজন সম্বলহীন নারী। ১৯৯৪ সালে ৫ম শ্রেনীতে পড়ার সময় কিসামত ছাতনাই চরের সুফিয়া বেগমের সাথে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিন খড়িবাড়ী গ্রামের আব্দুস সামাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সুবাধে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়ে উঠেনি।
৯ বছর স্বামীর সাথে সংসার সময় স্বামীর যৌতুকের চাহিদা পুরন করতে না তার সংসারে নেমে আসে শ্বশুর বাড়ির নির্যাতন। বাধ্য হয়ে একটি মেয়েকে নিয়ে খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিছামত ছাতনাই চরে পিতা কোরবান আলীর বাড়ীতে আশ্রয় নেয় সুফিয়া বেগম। পিতার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে কন্যা শারমীন বেগমকে ২০১২ সালে মেয়েটির বিয়ে দেয়। তিস্তার পাড়ের হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষে অক্্রফামের অর্থায়নে পল্লীশ্রী রিকল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
 সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিসামত ছাতনাই গ্রামের কোরবান আলী ও ছকিনা বেগমের মেয়ে সুফিয়া বেগম। ১৯৯৭ সালে তার পিতা কোরবান আলী মারা যায়। ২০০১ সালে মা সকিনা বেগমও মারা যায়। ২০০৫ সালের সিয়াম হোসেনকে পালিত পুত্র নেয় সুফিয়া বেগম। এখন পালিত পুত্রের সাথে সুফিয়া বেগম কিসামত ছাতনাই চরে বসবাস করছে। সিয়াম হোসেন বর্তমানে কিসামত ছাতনাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র। পিতা মাতাকে হারিয়ে সুফিয়া বেগম অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে চরম সংকটে পড়ে। ২০১৪ সালে স্থানীয় একটি সেবাদানকারী বেসরকারী এনজিও পল্লীশ্রী রিকল প্রকল্প সুফিয়ার পাশে এসে দাড়ায়। সুফিয়া বেগম চায় তিস্তার চরাঞ্চলের গ্রামের গরু ছাগল ও মুরগী লালন পালন করতে। তার চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে এনজিওটি ৩ দফায় সুফিয়াকে প্রানী সম্পদের ভ্যাকশিনেসন ও চিকিৎসার জন্য ১২দিনের প্রশিক্ষন প্রদান করেন। সুফিয়া বেগম জানায়, তিস্তার চরের বাড়ীতে এক সময় এলাকার হতদরিদ্র জনগন গরু ছাগল ও মুরগি পালন করতে পারত না। তিনি প্রশিক্ষন দেয়ার পর পল্লী-শ্রী স্থানীয় সেবাদানকারী হিসেবে প্রানী সম্পদ রক্ষায় উপকরন দিয়েছে। তিনি প্রতিটি বাড়ীতে গিয়ে গরু, ছাগল ও মুরগীর ভ্যাকশিনেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধ সরবরাহ করে থাকেন। এলাকায় হতদরিদ্রদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি তিনি নিজেই নারী সদস্য হিসেবে মডেল তৈরি করেছেন। গত ৯ মাসে ভ্যাকশিনেশন করে সুফিয়া বেগম আয় করেছে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি ভ্যাকশিনেশনে গরু ১০টাকা, ছাগল ৫টাকা ও মুরগীকে ১টাকা করে নেয়। প্রতিমাসে সুফিয়ার আয় হয় ২ হাজার টাকার উপরে। তার বাড়ীতে বর্তমানে দেশীয় জাতের ৩৯টি মুরগী রয়েছে। প্রতিদিন সুফিয়া বেগম ৮-১০টি মুরগীর ডিম পাচ্ছে। তার ও ছেলে সিয়ামের পুষ্টির চাহিদা পুরন করে বাজারে ডিম বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হচ্ছে। ডিম বাজারে বিক্রির টাকায় সিয়াম লেখাপড়ার বিশেষ ভুমিকা রাখছে। সুফিয়া বেগম চলতি মৌসুমে চরের ৫বিঘা জমি ১৫হাজার টাকায় লিজ নিয়ে ভুট্টার আবাদ করেছে। গ্রামীন ব্যাংকে প্রতিমাসে সঞ্চয় করেন ১৫০ টাকা। গ্রামে আনজুমানায়ারা বেগম জানায়, তিস্তার দুর্গম চরে হাঁসমুরগী পালন করা যেত না, বিভিন্ন ওসুকের কারনে মারা যেত। বর্তমানের সুফিয়া কারনে গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে শত শত হাসমুরগী পালন করতে পারছে। একই গ্রামের আখি আকতার বলেন, গ্রামে ছাগল ও ভেড়ার পালন করতে পারতাম না বর্তমানে সুফিয়া আপা বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভ্যাকশিনেশনের কারনে তার ৫টি ভেড়া ও ৪টি ছাগল পালন করতে পাড়ছে।  সুফিয়া বেগম কিসামত ছাতনাই, দোহলপাড়া ও বাধপাড়া গ্রামের বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রানী সম্পদের চিকিৎসা করে থাকেন। ডিমলা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভ্যাটিনারী ফিল্ড এসিসটেন্ট (ভিএফএ) শাহিনুর ইসলাম জানান, সরকারীভাবে জনবল কম থাকায় সুফিয়া বেগম নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যাপক ভুমিকা রাখছে যা সরকার এককভাবে করা অসম্ভব। পল্লীশ্রী রিকল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মন জানায়, সুিফয়া বেগম প্রানী সম্পদের প্রশিক্ষনের কারনে ৩টি গ্রামের কয়েকশত পরিবার হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল ও ভেড়া পালনে কোন রোগবালই না হওয়া কারনে হতদরিদ্ররা স্বালমম্বী হওয়ায় পাশাপাশি নারী সদস্য হিসেবে বিশেষ ভুমিকা পালন করছে। এলাকার অন্যান্য নারীরা অনুপ্রানীত হয়ে গবাদি পশু পালনে এগিয়ে আসছে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 5019826052993449694

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item