বড়কুঠি রাজশাহী অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন ইমারত।
https://www.obolokon24.com/2014/12/blog-post_82.html
রাজশাহী শহরের একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পদ্মা নদী।আর এই পদ্মা নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রাজশাহী শহর।রাজশাহী শহরের আর,ডি,এ মার্কেটের দক্ষিনে পদ্মার তীর ঘেঁসে রয়েছে বিশাল এক বহু পুরাতন ভবন।এই বিশাল ভবনের নাম বড়কুঠি।সুনির্দিষ্টভাবে এই ইমারতের নির্মাণকাল নির্ধারণ করা না গেলেও বিভিন্ন সুত্রের বিচারে এর নির্মাণকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে
বলে ধারণা করা হয়। এটি প্রথমে ওলন্দাজ বা ডাচদের বাবসাকেন্দ্র ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ডাচরা ভারতে তাদের কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৮১৪ সালে ইংরেজদের সাথে একটি চুক্তি করে বড়কুঠিসহ ভারতের সকল বাবসা কেন্দ্র ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানিকে হস্তান্তর করে। বড়কুঠির দায়িত্ব গ্রহন করে ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত তারা এটিকে তাদের বাণিজ্যিককেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করে।১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই বড়কুঠি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রশাসনিক ভবন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বড়কুঠি সাহেব বাজার এবং রাজশাহী কলেজের দক্ষিণে এবং পদ্মা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত। ইষ্টক নির্মিত এবং সমতল ছাদ বিশিষ্ট এই ইমারতটি আঠার শতকের প্রথমার্ধে (১৭২৫ সনের পূর্বে) ওলন্দাজ রেশম ব্যবসায়ীদের নির্মিত এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি। কুঠিটির বহির্ভাগ এর দৈর্ঘ্য ২৪ মিটার (৮২-০) এবং প্রস্থ ১৭.৩৭ (৬৭-০)। দ্বিতল বিশিষ্ট এই ইমারতটি বিভিন্ন আয়তনের মোট ১২ টি কক্ষে বিভক্ত। দ্বিতলে একটি সভাকক্ষসহ ৬টি কক্ষ আছে। কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পূর্ব-পশ্চিমে ৯.৬০ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬.৩০ মিটার আয়তন বিশিষ্ট আয়তাকার সভাকক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে বারান্দা (উত্তরের বারান্দা ৯.৬০ ও ৫.৮৫ মিটার এবং দক্ষিণের বারান্দা ৯.১৮ ও ৫.৮৫ মিটার আয়তন বিশিষ্ট) এবং কক্ষের পশ্চিমদিকে দুটি এবং পূর্ব দিকে এক সারিতে তিনটি কক্ষ বিদ্যমান।
প্রকৃতপক্ষে ওলন্দাজ বাবসায়িরা জরুরী সময়ে ইমারতটি দুর্গ হিসাবে ব্যবহার করত। এজন্য ইমারতের ছাদে এবং নিচে বেশকটি কামান শত্রুদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকত। ১৮৩৩ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে আসলে কামানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। এখানকার তিনটি পুরাতন কামান এখনও রাজশাহী পুলিসলাইন এ সংরক্ষিত আছে। এই বড়কুঠিতেই বাংলার কৃষকদের ওপর নীলকর ইংরেজরা চালাত অমানুষিক নির্যাতন। এই দোতলা ভবনটার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রয়েছে দুটো ঘোরানো সিঁড়িঁ।এই সিঁড়িঁ দুটো ভবনটার মাটির নীচে চলে গেছে।আর মাটির নীচে রয়েছে এক বিশাল বড় রুম।এই মাটির নীচের রুমের ভিতর দিয়ে পদ্মা নদীর তলা দিয়ে ছিল এক বিশাল বড় একটা রাস্তা।এই রাস্তা দিয়ে নাকি একসাথে ১০টা ঘোড়া দৌড়াতে পারতো।আর এ পথটার শেষ মাথা ছিল বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার রাজবাড়ী পর্যন্ত।এখন অবশ্য কতৃপক্ষ সিঁড়িঁ দুটোর নীচের দিকে অর্ধেক প্রাচীর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে রেখেছে।