সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশন টিকিট কালোবাজারিদের স্বর্গরাজ্য

  তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

 নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে রেলওয়ে টিকিট কলোবাজারির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাউন্ডারে কর্মরত বুকিং সহকারীরা ওই টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন এখন “সোনার হরিণ”। এতে করে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা টিকিট সংগ্রমে চরম বিপাকে পড়েছেন।
নীলফামারীর রেলওয়ে শহর সৈয়দপুর। এখানে দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা অবস্থিত। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী রেলওয়ে পথে বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। চলাচল করে আরো বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেনও। নীলফামারীর ডোমারের চিলাহাটি থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশনের জন্য এ ট্রেনটি নির্ধারিত আসন বরাদ্দ রয়েছে। বরাদ্দকৃত আসনের মধ্যে রয়েছে চেয়ার (শোভন) ১২০ টি, এসি ¯িœগ্ধা চেয়ার ২৫ টি, নন-এসি বাথ ৬টি এবং এসি বাথ ১০টি। এর মধ্যে আবার প্রতি ঈদের সময় আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোগ করা হয়। তখন এ স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু তারপরও এখানে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পান না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ১ জুন থেকে পর্যায়ক্রমে ১৫ জুন পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শুরু হয়। সর্বশেষ ১৫ জুন দেয়া হয় ২৪ জুনের ফিরতি  টিকিট। কিন্তু নির্ধারিত দিনের শুরু থেকে সাধারণ যাত্রীরা রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও একটি টিকিট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। কারণ টিকিট কালোবাজারি সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা কাউন্টারের বুকিং সহকারিরা আগেভাগেই টিকিট বের করে নেন। পরে কাউন্টার খুলে হাতেগোনা কয়েকজনকে টিকিট দিয়েই বলেন টিকিট শেষ। এতে করে টিকিটের জন্য লাইনের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে বুকিং সহকারীদের প্রায় প্রতিদিনই বাক্বিতন্ডা হয়।
 একটি সূত্র জানায়, টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের মূল হোতা হচ্ছে বুকিং সহকারী মাহবুব ও সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার মিলরাইট সপ’র শ্রমিক মাহবুব ওরফে জামাই মাহবুব। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে বেশ কয়েকজন বুকিং সহকারী থাকলেও বুকিং সহকারী মাহবুব হোসেনের ওপর কথা বলার কেউ নেই। তাছাড়াও তিনি স্থানীয় হওয়ার তাঁর দাপটে অন্যরা একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন অন্যরা।
সূত্র আরো জানায়, বুকিং সহকারি মাহবুব টিকিট কালোবাজারি মূল হোতা। সে জামাই মাহবুরের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন যাবৎ টিকিট কালোবাজারি করে আসছে। বুকিং সহকারী মাহবুর মূলতঃ কাউন্টার থেকে অনলাইনে টিকিট বের করেন। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে সে সব টিকিট কালোবাজারে তিন-চারগুন বেশি দামে বিক্রি থাকেন।
গতকাল (বুধবার) সকাল ১০ টায় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অতিরিক্ত বগির টিকিটের জন্য অনেকেই স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ও স্টেশন মাষ্টারের কক্ষের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছে। এ সময় টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করছিলেন বুকিং সহকারী মো. কাওসার। তিনি জানান নীলসাগর ট্রেনের কোন টিকিট নেই। কিন্তু পরক্ষণে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে বুকিং সহকারী মাহবুব হোসেন আসেন। এর পর স্টেশনের টিকিট নিতে আসা বেশ কয়েকজন তাঁর পিছু নেন। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ ধরে সহকারী স্টেশন মাষ্টার  আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। এ  সময়  অপর এক বুকিং সহকারী রনির সঙ্গে  বুকিং সহকারী মাহবুরের  টিকিট নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু হয়।  পরবর্তীতে তাদের মধ্যে আবার সমঝোতা হলে উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত হয়। এর কিছু সময় পর দেখা যায় বুকিং সহকারী মাহবুব অপর টিকিট কাউন্টার থেকে আগে বের করে রাখা ২০ তারিখের কয়েকটি টিকিট কয়েকজনের হাতে তুলে দেন। এ সময় কথা হয়  টিকিট নিতে আসা এক যুবকের সঙ্গে। তিনি জানান, মাহবুবকে আগেই টিকিটের টাকা দিয়ে রেখেছিলাম। তাই তিনি টিকিট দিলেন। এ সময় স্টেশন এলাকার ডা. রবি’র সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই কি আর বলল ? এখানে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে তাদের কাছে আমরা পাত্তাই পাচ্ছিনা। আর ট্রেনে টিকিট যেন এখন সোনার হরিণ। মেয়ে জামাই ঢাকায় যাবে। দুইটি টিকিটের জন্য কয়েকটি যাবৎ স্টেশনে ঘুরছি। টিকিট কাউন্টার থেকে বলা হয় অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত হলে টিকিট পাওয়া যাবে। আজ টিকিট নিতে এসে জানলাম অতিরিক্ত বগির টিকিটও শেষ হয়ে গেছে।
 একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে ধরে কালোবাজারে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট শোভন চেয়ার শ্রেণীর ৪৫৫ টাকার টিকিট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২ শ’ টাকা এবং এসি চেয়ার ¯িœগ্ধা শ্রেণীর ৮৭০ টাকার টিকিট ২ হাজার টাকা, এসি বাথ ১ হাজার ৬১০ টাকার  টিকিট সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
 সৈয়দপুর রেলওয়ে  স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাষ্টার মো. আলগমীর হোসেনের কাছে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে অতিরিক্ত বগি কবে থেকে সংযুক্ত  হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে তা বলতে পারেননি। আর টিকিট কালোবাজারির বিষয়েও তিনি কোন কথা বলেননি।
 এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কমার্শিয়াল কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর ০১৭১১-৬৯১৬৫৫ নম্বন মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তিনি রিসিভি না করায় তা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ যুব মৈত্রী ও ছাত্রমৈত্রীর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। গেল মে মাসে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে ওই মানববন্ধন করা হয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4551079284833734126

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item