ঠাকুরগাঁওয়ে তরুণদের উদ্দীপ্ত করতেই আলপনা

অাব্দুল অাওয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: একুশের প্রভাতফেরিতে ভাষার গানটির সঙ্গে সঙ্গে আরো একটি বিষয় বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সেটি হলো প্রভাতফেরির রাস্তায়, শহীদ মিনার চত্বরে, ‘আলপনা’ আঁকা থাকতেই হবে। আজ যত সহজ ও স্বাভাবিকভাবে শহীদ মিনার চত্বরে এবং সমাজ জীবনের যে কোন শুভ কাজে অনুষ্ঠান স্থলে ‘আলপনা’ আঁকা হয়। এর প্রতিষ্ঠায়ও রয়েছে সংগ্রামী ইতিহাস।

আর একুশের চেতনাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে তুলে ধরতে দ্বিতীয়  বারের মত রাস্তায় রংয়ের তুলিতে আকাঁ আলপনা তুলে ধরেছে জেলা প্রশাসন। 

মঙ্গলবার সকালে ঠাকুরগাঁও সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন রাস্তায় আলপনা আকাঁ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।

এ সময় তার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত  জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসলাম মোল্লা, প্রবীণ শিক্ষাবিদ মনতোষ ককুমার দে,জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক মাসুদুর রহমান বাবু, উদিচীর সভাপতি সেতারা বেগম,জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরচিতা দেব, চিত্রশিল্পী ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাদেমুল ইসলাম জাদু প্রমূখ।

প্রবীন শিক্ষাবিদ মনতোষ কুমার দে বলেন, ‘যাদের বিনিময়ে আমরা আজ বাংলা ভাষা এবং লাল সূর্য পেয়েছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা একুশের চেতনাকে নিয়ে যেতে চাই। যেন তারা এটাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, মনের মাধুরি মিশিয়ে কল্পনার জগৎকে ফুটিয়ে তোলার আরেক নাম আলপনা। বাঙালির সকল প্রাণের উৎসবে মিশে আছে আলপনার রং। আর ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে আঁকা আলপনা আমাদের আরও বেশি করে ভাষার প্রতি, ভাষার জন্য আত্মত্যাগ কারীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ব্যক্ত করে। শহীদ মিনারের বেদিতে লাল নীল সাদা, হলুদ নানা রঙের বর্ণীল আলপনা আমাদের সব বয়সের মানুষকে একুশের চেতনায় উদ্বিপ্ত করে। চারুশিল্পীরা কেউ দেখেনি গৌরবের সেই ভাষা আন্দোলন, তারপরও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশের আয়োজনের অংশ হতে পেরে গর্বিত নতুন প্রজন্মেরা। একুশ মানে ভাষা শহীদদের হারানোর শোক, একই সাথে একুশ মানে মাতৃভাষাকে অর্জনের গৌরব। এই শোক আর প্রাপ্তির গৌরবকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ চত্বর ও আশপাশ।

উল্লেখ্য, একুশের প্রভাতফেরি খালি পায়ে-হেঁটে শহীদ মিনারে এবং ভাষা শহীদদের কবর-আজিমপুর কবরস্থানে ফুলের অর্ঘ্য নিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালের পর থেকেই। ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-জনতা রাজনীতিবিদরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে দলে শহীদ মিনারে ও কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হতে শুরু করল। সেই যে শুরুÑতার ধারাবাহিকতা আজো চলছেÑ যতদিন বাংলাদেশ থাকবে এই প্রভাতফেরির সংস্কৃতি আবহমানকাল ধরে চলতে থাকবে। ১৯৫৩ সালে শহীদ মিনার ছিল ছাত্র জনতার হাতে তৈরি। সেই সময়ের মুসলিম লীগ সরকার বার বার এই শহীদ মিনার ভেঙ্গে দিয়েছে। ছাত্ররা সঙ্গে সঙ্গেই শত বাধার মুখেই আবার গড়ে তুলেছে শহীদ মিনার। প্রভাতফেরি প্রথমে মৌন মিছিল রূপে থাকলেও পরে আর মৌন মিছিল থাকেনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে কণ্ঠে চলে আসত জাগরণের গান, ভাষার গান, বিদ্রোহের গান। যেমনÑওরা আমার মুখের কথা কাইড়া নিতে চায়। ওরে ও বাঙালী, ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা, চল্ চল চল উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল এবং আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কী ভুলিতে পারি এমনি অনেক গান।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি প্রথমে গাওয়া হতো শিল্পী আবদুল লতিফের সুরে। বেশ কয়েক বছর পর এই গানে নতুন করে সুর দেন শিল্পী আলতাফ মাহমুদ। নতুন সুর মানুষের ভাল লেগে যায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত সুরটিই আলতাফ মাহমুদের অসাধারণ সৃষ্টি। তারুণ্যের আবেগ ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার সংগ্রামী দ্রোহ নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচনা করেছিলেন এই গানের চরনগুলো। প্রতিটি চরণেই আছে মানুষকে জাগিয়ে তোলার প্রেরণা। মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসার আবেগ ও ভাষা শহীদদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

পুরোনো সংবাদ

ঠাকুরগাঁও 8892389661300414195

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item